ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: বর্ষার একটা নিজস্ব রূপ আছে। আর সেই রূপ আমাদের এই রাজ্যে আরও খোলতাই হয়। পাহাড়-জঙ্গল-নদী-সমুদ্রের এই বঙ্গ আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে বর্ষার কয়েক মাস। তাই দু-একদিনের জন্য কাছেপিঠে বেরিয়ে পড়তেই পারেন। কোথায় যাবেন? ভ্রমণ অনলাইন দিচ্ছে তার খবর। আজ প্রথম পর্ব।
গেঁওখালি
একেবারে সামনেই দুই নদীর সঙ্গম – রূপনারায়ণ আর গঙ্গা। ও পার যেন দেখা যায় না। সুবিস্তীর্ণ নদীর ধার বরাবর পিচপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখলেন কালো মেঘ জমেছে আকাশ ছেয়ে। কাছের সঙ্গমস্থল ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এল। বৃষ্টি যেন ওই দিক থেকেই ধেয়ে আসছে। ঝিরঝির থেকে ঝমঝম। কাছেই তো নিজেদের আশ্রয়স্থল। সেখানেই চলে আসুন। না হয়, বারান্দায় বসে উপভোগ করুন বর্ষার গেঁওখালি। কাছাকাছি ঘুরে আসতে পারেন মহিষাদল রাজবাড়ি, নদী পেরিয়ে গাদিয়াড়া ও নুরপুর।
কোথায় থাকবেন
হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ত্রিবেণী সঙ্গম ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। যোগাযোগ ০৩২২৪২৫৫৯২৯।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে নানা ভাবে গেঁওখালি যাওয়া যায়। হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান, এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় লাগে। বাগনান থেকে বাসে শ্যামপুর, সেখান থেকে অটোয় গাদিয়াড়া। বাগনান স্টেশন থেকে অটোতেও গাদিয়াড়া আসা যায়। সেখান থেকে ফেরিতে গেঁওখালি। অথবা কলকাতা থেকে বাসে নুরপুর (৫২ কিমি) গিয়ে সেখান থেকে ফেরিতে গেঁওখালি।
বোম্বে রোড (জাতীয় সড়ক ১৬) ধরে গিয়ে মেচেদার কাছে হলদিয়া রোড (জাতীয় সড়ক ১১৬) ধরে নন্দকুমার, সেখান থেকে বাঁ দিকে গেঁওখালির পথ। দূরত্ব ১১১ কিমি। ট্রেনে মেচেদা এসে সেখান থেকে তমলুক-মহিষাদল রোড ধরেও গেঁওখালি আসা যায়। দূরত্ব কিছু কম পড়ে।
গাদিয়াড়া
দেশি নৌকায় নদীতে ভেসে পড়ুন। মাঝি চিনিয়ে দেবেন কোন দিকটা নুরপুর আর কোন দিকটা গেঁওখালি। তিন নদীর সঙ্গম এই জায়গাটা – গঙ্গা, রূপনারায়ণ আর দামোদর। আর হুড়মুড় করে যদি কালো মেঘের দল ছুটে আসে, ঘাবড়াবেন না। মাঝি নিরাপদে তীরে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। আর নিতান্তই যদি নদীপথে ভ্রমণে না যান, নদীতীরের বাঁধানো ইটপথ ধরে ঘুরে বেড়ান, উপভোগ করুন বর্ষার গাদিয়াড়াকে। চাইলে ফেরিতে ঘুরে আসতে পারেন গেঁওখালি, নুরপুর।
কোথায় থাকবেন
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের রূপনারায়ণ ট্যুরিস্ট লজ। অনলাইন বুকিং www.wbtdcl.com
হোটেল পূর্ণিমা http://www.hotelpurnimagadiara.com
হোটেল চলন্তিকা, ফোন ০৩৩৬৬০৭৭২৫২, ০৯৮৭৫৬৩৪৪৪২, ০৯৮৭৫৬৩৪৪৪৭ http://www.sddhotels.com
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান, এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় লাগে। বাগনান থেকে বাস বদল করে শ্যামপুর হয়ে গাদিয়াড়া আসা যায়। শ্যামপুরে অটো বদল করে বা টানা অটোয় বাগনান স্টেশন থেকে আসা যায় গাদিয়াড়ায়। এসপ্ল্যানেড থেকে বাসেও গাদিয়াড়া আসতে পারেন।
সোজা গাড়িতে এলে বোম্বে রোড (জাতীয় সড়ক ১৬) ধরে উলুবেড়িয়া আসুন। সেখান থেকে শ্যামপুর হয়ে গাদিয়াড়া। মোট দূরত্ব ৭৮ কিমি।
গড়চুমুক
সরকারি ভাবে এটা খাল, জুড়েছে পুবে ভাগীরথী আর পশ্চিমে দামোদরকে। কিন্তু এই খাল নদীর থেকেও সুবিস্তৃত। আর এখন তো বর্ষা, তাই অন্য রূপ। আর এর ধারেই মৃগদাব। ইউক্যালিপটাস-ঝাউ-চন্দন-শিশু-জারুল-কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়ায় ছাওয়া। বর্ষায় এর রূপ আরও খোলতাই হয়। নৌকায় চেপে জলভ্রমণেরও সুযোগ আছে এখানে।
কাছাকাছি ঘুরে আসতে পারেন গাদিয়াড়া। শ্যামপুরে অটো বদল করে যেতে পারেন অথবা টানা অটো ভাড়া করে নিতে পারেন। দূরত্ব ১৯ কিমি।
কোথায় থাকবেন
পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের গড়চুমুক ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। অনলাইন বুকিং wbfdc.net ।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে উলুবেড়িয়া ঘণ্টা খানেকের পথ, সেখান থেকে বাসে, অটোয় বা শেয়ার ট্রেকারে বা গাড়িতে, দূরত্ব ১৫ কিমি। পৌঁছে যাবেন ৫৮ গেট তথা গড়চুমুক। সোজা গাড়িতে এলে উলুবেড়িয়া হয়ে পথ, দূরত্ব ৫৯ কিমি। এসপ্ল্যানেড থেকে গাদিয়াড়াগামী বাস ৫৮ গেট হয়ে যায়।
ওরফুলি (কোলাঘাট)
বর্ষা এলেই মনে পড়ে যায় ইলিশের কথা। আর ইলিশ বললেই চলে আসে কোলাঘাট। বর্ষায় রূপনারায়ণের অন্য রূপ। কোলাঘাটে নদীর মাঝে চরগুলো আর দেখা যায় না। মৎস্যজীবীরা ভেসে পড়ে নৌকা নিয়ে ইলিশের সন্ধানে। নদীর পারে বসে দেখুন তাদের কর্মকাণ্ড। নদীর ধার বরাবর হাঁটাহাঁটি করুন। ইলিশের স্বাদ নিন। সবুজের সংস্পর্শে দু’টো দিন কাটিয়ে আসুন।
কোথায় থাকবেন
রূপ রিভার রিসর্ট। বিশদে জানতে দেখুন www.theroopresort.com, ফোন ৯৬৭৪৩৯৩৯৩৯/৯০৩৮৮৮১৫৫৫
হোটেল সোনার বাংলা। বিশদে জানতে দেখুন http://www.hotelsonarbangla.com, ফোন ০৩৩-৪০০৬০৭৮৭/০৩৩-৪০০১৫৭৭৫/৮৬৯৭৯৭২০৩২/৮৬৯৭৯৭২২০৫
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে দেউলটি, সেখান থেকে অটোয় ওরফুলি। স্টেশন থেকে সাড়ে ৩ কিমি। সোজাসুজি গাড়ি নিয়েও চলে আসতে পারেন। বোম্বে রোড ধরে দেউলটি, বাঁ দিকে ওরফুলির পথ, কলকাতা থেকে দূরত্ব ৬৪ কিমি।
পৌষি (মনচাষা)
বাগদা নদীর ধারে ভগবানপুরের পৌষি গ্রাম। বর্ষায় তার মন মাতাল করা রূপ। ছোট্ট গ্রামটা বর্ষায় আরও সবুজ হয়ে ওঠে। মন আর চোখ জুড়িয়ে যায়। পায়ে হেঁটে ঘুরে নিন মাছভর্তি ঝিল, শাল্মলি বীথি, ভার্গবী মায়ের মন্দির, লোকশিল্পের আখড়া ‘সহজিয়া’।
কোথায় থাকবেন
মনচাষা রুরাল ট্যুরিজম প্রজেক্ট। বিশদ জানতে দেখুন bengaltourism.blog
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে চলুন কাঁথি। স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন। স্টেশন থেকে ‘মনচাষা’র পিক আপেরও ব্যবস্থা আছে। বাসে এলে নামতে হবে কালীনগর বাসস্টপে। সেখান থেকে ‘মনচাষা’র পিক আপ। গাড়িতে এলে বোম্বে রোড ধরে মেচেদা, তার পর হলদিয়া রোড ধরে নন্দকুমার, সেখান থেকে দিঘা রোড ধরে কালীনগর হয়ে পৌষি। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৩৯ কিমি।