ঘরে বসে মানসভ্রমণ: ‘ছোটোনাগপুরের রানি’ নেতারহাট

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: সাধে কি আর তাকে ‘ছোটোনাগপুরের রানি’ বলে! ৪১০০ ফুট উচ্চতায় শাল-মহুয়া-পলাশে ছাওয়া, পাইন-ইউক্যালিপটাসে ঢাকা, জঙ্গলে ভরা জনপদ। ড্যাঞ্চিবাবুদের পশ্চিমের মতো অত জনপ্রিয় না হলেও নেতারহাট এককালে বাঙালিদের খুব প্রিয় গন্তব্য ছিল। আসলে পর্যটক-সমাগমের নিরিখে মধুপুর-শিমুলতলা-গিরিডির থেকে একটু পিছিয়ে নেতারহাট, কারণ কলকাতা থেকে দূরত্ব। কিন্তু সৌন্দর্যে সে সবাইকে টেক্কা দেয়। উগ্রপন্থী উৎপাতের কারণে বাঙালির ভ্রমণ-মানচিত্রে ব্রাত্যই হয়ে গিয়েছিল নেতারহাট। ইদানীং আবার সে তার পূর্ব গরিমা ফিরে পাচ্ছে। তবে প্রকৃতি আজও দরাজ এই নেতারহাটে।

ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় ভ্রমণ অনলাইন আজ আপনাদের নিয়ে যাচ্ছে নেতারহাটে।  

নেতারহাটে প্রবেশ।

উপভোগ করুন

প্রকৃতির এক অনাবিল মাদকতা আছে নেতারহাটে। তাই লোকে নেতারহাটকে নেচারহাটও বলে থাকে। বৈচিত্র্য আছে এর প্রকৃতিতে। আর পাঁচটা পাহাড়ি জনপদের মতো কোলাহল নেই এখানে, শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ। ছোট্ট অবকাশ যাপনের মনোরম পরিবেশ। পাহাড়ের শিরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত নেতারহাটের মূল আকর্ষণ।  

দুপুরের মধ্যে নেতারহাট চলে এলে পাইনের জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করুন। বিকেলটা কাটিয়ে আসুন এখানকার পাবলিক স্কুল দেখতে। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখে নিন। 

নাসপাতি বাগান।

আর কী দেখবেন

(১) ভোরে দেখুন সূর্যোদয় – পালামৌ ডাকবাংলো অথবা ঝাড়খণ্ড পর্যটনের প্রভাত বিহার থেকে। অপরূপ এই সূর্যোদয়ের সাক্ষী থাকতে ভুলবেন না।

(২) ম্যাগনোলিয়া পয়েন্ট – ৯ কিমি। প্রকৃতিপ্রেমে মগ্ন সাহেবকন্যার আত্মহত্যার স্মারক রূপে নাম। সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত।

(৩) কোয়েল ভিউ পয়েন্ট – ম্যাগনোলিয়া পয়েন্টের পথে ২ কিমি। দেখে নিন পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে বয়ে চলা কোয়েল নদীর সুন্দর দৃশ্য।

(৪) আপার ঘাঘরি ফলস্‌ – ২ কিমি।

Lower Ghaghri Falls
লোয়ার ঘাঘরি জলপ্রপাত।

(৫)  লোয়ার ঘাঘরি ফলস্‌ – ৭ কিমি।

(৬)  সদনি ফলস্‌ – ২৮ কিমি। সর্পিলাকার জলপ্রপাত।      

 (৭) লোধ ফলস্‌ – ৬০ কিমি। ৪৬৮ ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া লোধ জলপ্রপাত। আরও এক নাম বুঢ়াঘাঘ

আরও ঘুরুন – নেতারহাট ড্যাম, নাসপাতি বাগান ইত্যাদি।  

Lodh Falls
লোধ জলপ্রপাত।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে রাঁচি গিয়ে সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে নেতারহাট। কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বইয়ের সঙ্গে রাঁচি সরাসরি ট্রেনপথে যুক্ত। তবে ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে আসতে হলে হাওড়া, খড়গপুর বা টাটানগরে ট্রেন বদল করে আসতে হবে।       

ট্রেনে কলকাতা থেকে রাঁচি – (১) ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে রাত ৮.০৫ মিনিটে, রাঁচি পৌঁছোয় সকাল ৭টায়; (২) শতাব্দী এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল ৬.০৫ মিনিটে, রাঁচি পৌঁছোয় দুপুর ১.১৫ মিনিটে, (৩) হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (ভায়া টাটানগর) – বুধ, বৃহস্পতি ও শনিবার হাওড়া থেকে ছাড়ে দুপুর ১২.৫০ মিনিটে, রাঁচি পৌঁছোয় রাত ৯.১০-এ; (৪) হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (ভায়া আদ্রা) – সোম, মঙ্গল ও রবিবার হাওড়া থেকে ছাড়ে দুপুর ১২.৫০ মিনিটে, রাঁচি পৌঁছোয় রাত ১০.১৫-য়।

রাঁচি থেকে নেতারহাট, ১৫৩ কিমি। রাঁচি থেকে সরকারি (স্টেশনের কাছেই সরকারি বাসস্ট্যান্ড) বা বেসরকারি বাসে (রাতু রোডে বাসস্ট্যান্ড) বা গাড়িতে যেতে পারেন। গাড়িতে গেলে পথে দেখে নিন রাতুর রাজবাড়ি।

Prabhat Bihar, Netarhat
প্রভাত বিহার, নেতারহাট।

কোথায় থাকবেন

রাঁচি, নেতারহাট, বেতলা এবং ডালটনগঞ্জে রয়েছে ঝাড়খণ্ড পর্যটনের হোটেল। অনলাইন বুকিং jharkhandtourism.gov.in। সব জায়গাতেই কিছু বেসরকারি হোটেল পাবেন। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সন্ধান পেয়ে যাবেন। বেতলায় টাইগার প্রজেক্টের ফরেস্ট রেস্ট হাউস আছে। ফরেস্ট রেস্ট হাউসের জন্য যোগাযোগ – ০৬৫৬৭-২২২৬৫০

ফেরার পথে

ফেরার পথে চলে আসুন বেতলা, ৯৩ কিমি। ভোরেই বেরিয়ে পড়ুন। গাড়ি ভাড়া করে আসাই সুবিধা। সরাসরি বাসেও আসতে পারেন। তবে সরাসরি বাসের সংখ্যাল্পতার জন্য মহুয়াডারে বাস বদল করে আসতে পারেন। বেতলায় করুন জিপ সাফারি ও হাতি সাফারি। দেখে নিন। বেতলা ফোর্ট বা রাজা মেদিনী রায়ের ফোর্ট

বেতলায় একটা দিন কাটিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ডালটনগঞ্জের উদ্দেশে, ২৪ কিমি। পথে ৭ কিমি যেতে কেঁচকি (কোয়েল ও ওর্গা নদীর সঙ্গম)।     

জঙ্গলে ছাওয়া নেতারহাট।

পরামর্শ

নেতারহাট যাওয়ার আগে রাঁচিতে দু’টো দিন কাটিয়ে যান।

কলকাতা থেকে নেতারহাট যেতে হলে ট্রেনে রাঁচি হয়ে যাওয়াই সুবিধার। রাঁচি হয়ে ফিরতে পারেন। কিংবা ডালটনগঞ্জ হয়ে যদি ফেরেন, তা হলে বেতলা ন্যাশনাল পার্কে এক-দু’টো দিন কাটাতে পারেন।

সব চেয়ে ভালো হয় রাঁচি হয়ে যাওয়া এবং ডালটনগঞ্জ হয়ে ফেরা। তা হলে এক সপ্তাহের একটা ভ্রমণ ছক বানিয়ে নেওয়া যায়।  

আরও পড়ুন: ঘরে বসে মানসভ্রমণ: হিমালয়ের কোলে কসৌলি     

ডালটনগঞ্জ থেকে হাওড়া ফেরার জন্য রয়েছে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস, রোজ ডালটনগঞ্জ ছাড়ে দুপুর ০১.২৯ মিনিটে, হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন ভোর সাড়ে ৪টেয়। এ ছাড়াও গোটা চারেক সাপ্তাহিক ট্রেন আছে। এগুলি পৌঁছোয় হাওড়া, সাঁতরাগাছি ও কলকাতা স্টেশনে।     

রাঁচি থেকে হাওড়া ফেরার জন্য রয়েছে ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং দু’টি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। ট্রেনের বিশদ তথ্যের জন্য দেখুন erail.in

নেতারহাটে দুরের জায়গা যাওয়ার জন্য জিপ বা গাড়ি ভাড়া করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *