ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউন? আর তার জেরে ঘরবন্দি? কথাও যেতে পারছেন না? মন খারাপ করে বসে থেকে কী হবে? বরং আসুন, এই সময়টা কাজে লাগাই, নানা জায়গায় মানসভ্রমণ করি। এক দিন সব কিছু স্বাভাবিক হবে। আবার আমরা ঘর থেকে বাইরে দু’ পা ফেলব। তখন কাজে লাগবে এই মানসভ্রমণ।
চলুন আজ যাই বস্তার।
রামায়ণে আছে অযোধ্যার যুবরাজ রাম তাঁর পত্নী সীতা আর ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে চোদ্দো বছর বনবাসে কাটান। অযোধ্যা থেকে চিত্রকুটে আসেন তাঁরা, তার পর দণ্ডকারণ্যে। তত দিনে বনবাসের এক বছর কেটে গিয়েছে। বাকি প্রায় তেরো বছর এই শ্বাপদসংকুল অরণ্যে কাটান, আজকের দিনে যে জায়গা ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলার অন্তর্গত।
এক দিকে অবুঝমাড় পাহাড় আর অন্য দিকে পূর্বঘাট পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত, ওড়িশা আর অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানা ঘেঁষা বস্তার অঞ্চলের আয়তন ৬৫৯৭ বর্গ কিলোমিটার। পাহাড়, জঙ্গল, বন্যপ্রাণী, ঝরনা, পুরোনো মন্দির, প্রাসাদ – কী নেই এই বস্তারে। তার সঙ্গে আদিবাসী মানুষের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য এই বস্তার।
বস্তার জেলার সদর দফতর জগদলপুর ১৮২৪ ফুট উঁচু, ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুর থেকে ২৮৭ কিমি। বিশাখাপত্তনম থেকে আরাকু হয়ে এলে ২৯৭ কিমি। হাওড়ার সঙ্গে সরাসরি ট্রেনপথে যুক্ত। রৌরকেলা বা বিশাখাপত্তনমে ট্রেন বদল করেও যাওয়া যায়।
বস্তারে কী দেখবেন
(১) জগদলপুর – বাসস্ট্যান্ডের কাছে কাকতীয় রাজাদের প্রাসাদ; প্রাসাদদ্বারে রাজপরিবারের কুলদেবী দন্তেশ্বরী মাতার মন্দির, সিংহবাহিনী দুর্গাই এখানে দন্তেশ্বরী; পাশেই ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির; গঙ্গামুণ্ডা লেক; দলপত সাগর লেক; ধরমপুরায় অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজিয়াম।
(২) দন্তেওয়াড়া – মূল দন্তেশ্বরী মন্দির দন্তেওয়াড়ায়, জগদলপুর থেকে ৮৪ কিমি। অন্যতম সতীপীঠ। সতীর দাঁত পড়েছিল এখানে। ১৪ শতকের মন্দিরে পাথরের দেবীমূর্তি, অদূরে শঙ্খিনী ও ডঙ্কিনী নদীর সঙ্গম। ৫২টি মন্দির ছিল এককালে, এখন রয়েছে ৪টি মন্দির – গণেশ, শিব ইত্যাদি বিগ্রহ। আদিবাসীদের সাপ্তাহিক হাটও দেখার মতো। জগদলপুর থেকে বাসে বা গাড়িতে আসা যায়।
(৩) বরসুর – দন্তেওয়াড়া থেকে ৩১ কিমি, জগদলপুর থেকে ৯২ কিমি দূরে বরসুর, বস্তার রাজ্যের ১১ শতকের রাজধানী। আছে ১২ স্তম্ভের শিবমন্দির, গণেশ মন্দির, মামা-ভানজা মন্দির। জগদলপুর বা দন্তেওয়াড়া, যে কোনো জায়গা থেকেই বাসে বা গাড়িতে আসা যায়।
(৪) সাতধার – বরসুর থেকে ৬ কিমি দূরে, সাতধারায় ভাগ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইন্দ্রাবতী নদী।
(৫) চিত্রকোট – জগদলপুর থেকে ৩৮ কিমি দূরের ভারতের নায়াগ্রা ইন্দ্রাবতী নদীর জলপ্রপাত চিত্রকোট। বর্ষায় আধ কিমি জায়গা জুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইন্দ্রাবতী। জলোচ্ছ্বাসে রামধনুর রঙ প্রতিভাত হয়। ডোঙায় চেপে ভেসেও পড়া যায়। নীচে থেকে আরও এক রূপ চিত্রকোটের।
(৬) চিত্রধারা – জগদলপুর থেকে চিত্রকোটের পথে ৪ কিমি গিয়ে ডাইনে আরও ৪ কিমি গেলে চিত্রধারা জলপ্রপাত।
(৭) তামাড় ঘুমর জলপ্রপাত – চিত্রকোট থেকে ১২ কিমি।
(৮) তিরথগঢ় জলপ্রপাত – জগদলপুর থেকে ৩১ কিমি, কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের কমনর গেট থেকে ১০ কিমি দূরে পার্কের মধ্যে। ২১৪টা স্পাইরাল ধাপের সিঁড়ি ধরে নেমে যাওয়া যায় নীচে। অত্যাশ্চার্য স্ট্যালাগমাইট ও স্ট্যালাকটাইটের দণ্ড। ত্রিভুবনেশ্বর মহাদেব ও লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির। অদূরে নজরমিনার।
(৯) কটুমসর গুহা – তিরথগঢ় থেকে ৬ কিমি আর কমনর গেট থেকে ৮ কিমি দূরে বোরা গুহার মিনি সংস্করণ কটুমসর গুহা। কপিকলের সাহায্যে ৩৫ মিটার গভীরে নেমে দেখে নেওয়া যায় চুনাপাথরের দণ্ডরূপী শিবলিঙ্গ। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে।
(১০) কৈলাস গুহা – তিরথগঢ় থেকে ৩৫ কিমি, কটুমসর থেকে ৩৩ কিমি এবং কমনর গেট থেকে ২৮ কিমি দূরে কৈলাস গুহা। ৩২ কিমি দূরে জগদলপুর। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে।
(১১) কাঙ্গের ধারা – জগদলপুর থেকে ৪০ কিমি দূরে, জাতীয় সড়ক ২২১-এর ধারে। তিরথগঢ় জলপ্রপাত থেকে ১১ কিমি। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে।
(১২) দণ্ডক গুহা – কমনর গেট থেকে ৯ কিমি দূরে ২০০ মিটার দীর্ঘ, দুটি কক্ষে বিভক্ত, কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে, কাঙ্গের ধারার পাশে।
(১৩) মান্ডোয়া জলপ্রপাত – তিরথগঢ় জলপ্রপাত থেকে ২৮ কিমি, কাঙ্গের ধারা থেকে ৩১ কিমি।
(১৪) ভৈঁসা দরহা লেক – কুমিরের অবাধ আবাস এই লেক, কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে, জগদলপুর থেকে ৬৫ কিমি। জগদলপুর থেকে ৩২ কিমি দূরে কৈলাস গুহা। গুহার ৬ কিমি আগে কৈলাস গুহা মোড়। এই মোড় থেকে পাকা রাস্তাটি কৈলাস গুহায় গিয়েছে, আর ২৯ কিমি কাঁচা রাস্তা গিয়েছে ভৈঁসা দরহা লেকে। গহীন জঙ্গলের মধ্যে। গাড়ি যায়।
(১৫) কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক – জগদলপুর থেকে ২১ কিমি দূরে পার্কের কমনর গেট। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক দেখার জন্য বন কর্তৃপক্ষ পাঁচটি রুটে জিপসি সাফারি করে। সব সাফারিই জগদলপুর থেকে শুরু হয়। পাঁচটি রুট হল –
(ক) তিরথগড় জোন (জগদলপুর – কমনর গেট – তিরথগড় – বাটারফ্লাই জোন হয়ে ফেরা।)
(খ) কটুমসর জোন (জগদলপুর – কমনর গেট – কটুমসর – কাঙ্গের ধারা হয়ে ফেরা।)
(গ) কৈলাস জোন (জগদলপুর – কমনর গেট – নগলসর রোড – ডিয়ার পার্ক – কাঙ্গের ধারা – কৈলাস গুহা হয়ে ফেরা।)
(ঘ) দণ্ডক জোন ১ (জগদলপুর – কমনর গেট – জগদাঘাট – দণ্ডক গুহা – কাঙ্গের ধারা –ডিয়ার পার্ক হয়ে ফেরা।)
(ঙ) দণ্ডক জোন ২ (জগদলপুর – কমনর গেট – কাঙ্গের ধারা – ডিয়ার পার্ক – দণ্ডক গুহা – জগদাঘাট – তিরথগড় হয়ে ফেরা।)
সাফারির অনলাইন বুকিং http://www.kvnp.in/
জঙ্গল খোলা – ৯টা থেকে ৬টা। ঢোকার শেষ সময় – বিকেল সাড়ে চারটে।
জেনে রাখুন
তিরথগড়, কটুমসর গুহা, কৈলাস গুহা, দণ্ডক গুহা, কাঙ্গের ধারা ইত্যাদি দ্রষ্টব্য ন্যাশনাল পার্কের জিপসি সাফারিতে দেখে নেওয়া যায় আবার আলাদা করেও দেখা যায়। জিপসি সাফারিতে দেখতে চাইলে একাধিক সাফারি করতে হবে।
কোথায় থাকবেন
জগদলপুরে অনেক বেসরকারি হোটেল আছে, যাদের সন্ধান পাবেন makemytrip.com, goibibo.com, tripadvisor.in, tourmyindia.com, holidayiq.com প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে।
চিত্রকোটে রয়েছে ছত্তীসগঢ় পর্যটনের দনদমি লাক্সারি রিসর্ট। অনলাইন বুকিং http://cggovttourism.ddns.net/
আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন হস্তিনাপুরের এই মন্দিরে