ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: শনিবার বিকেলে গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি নেমে এসেছেন কলকাতার কসবার বাসিন্দা তাপস সেন। শিলিগুড়িতে নেমে প্রথমেই ভ্রমণ অনলাইনকে ফোন করে তিনি জানালেন, দুর্যোগের সময়ে সিকিমে থাকলেও এতটুকু আঁচ তাদের গায়ে লাগেনি। তাপসবাবুর কথায়, “যে হোটেলে ছিলাম, যে এজেন্ট আমাদের ভ্রমণের বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন, তাদের জন্যই দুর্যোগের আঁচ বুঝলাম না। আমরা সবাই খুব খুশি।”
তিস্তায় যে দিন ভয়াবহ জলস্ফীতি হল সে দিন সপরিবার পূর্ব সিকিমের পদমচেনে ছিলেন তাপসবাবু। ৭ জনের দলে তিনি এবং তাঁর ভায়রাভাই শুভাশিস সেন ছাড়া বাকিরা মহিলা এবং তরুণ। এই প্রবল দুর্যোগে ঘাবড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি ট্যুর বাতিল করতেই পারতেন তাঁরা। তিনি সেই পথে হাঁটেননি তাঁরা।
যে দিন দুর্যোগ এল, পদমচেন থেকে শিলিগুড়ির রাস্তা না ধরে গ্যাংটক চলে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তাপসবাবুর কথায়, “আমাদের এজেন্ট বলেছিলেন শিলিগুড়ি না নেমে গ্যাংটকে চলে যেতে। কারণ গ্যাংটক রাজধানী শহর, সব পরিষেবা পাবেন। কিন্তু শিলিগুড়ি নামতে গেলে, কতক্ষণে সেখানে পৌঁছোবেন তার কোনো ঠিক নেই। এখন বুঝছি সেটা কত ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।”
গ্যাংটকে যে হোটেলে তাঁরা ছিলেন, সেখানকার ম্যানেজার এবং কর্মীদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে এই পর্যটকদল। রাত্রিবাসে তো কোনো অসুবিধা হয়নি এবং এত দুর্যোগের মধ্যেই তিন বেলা পেটভরে খাবার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “হোটেল কর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে তো রোজ সন্ধ্যায় ওদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলত।”
যদিও দুর্যোগে কিছু পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। যেমন পদমচেন থেকে সিল্করুট ঘুরে গ্যাংটক ঢোকার কথা থাকলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় ঘুরপথে গ্যাংটক আসতে হয়েছিল তাঁদের। ফলে বাবামন্দির, নাথু লা, ছাঙ্গু কিছু দেখা হয়নি। আবার ভ্রমণের শেষ দু’দিন পেলিং যাওয়ার কথা থাকলেও সেই পরিকল্পনা বাতিল করে একদিন বাড়তি গ্যাংটকে থেকে একদিন আগেই শিলিগুড়ি নেমে এসেছেন তাঁরা। তবে এর ফলে গ্যাংটক এবং রুমটেকের সাইটসিয়িং ভালো ভাবে করতে পেরেছেন তাঁরা।
তবে দুর্যোগের রেশ তাঁরা টের পেয়েছেন শুক্রবার গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি নামার সময়। রংপোতে তিস্তা কী তাণ্ডব করেছে সেটা নিজের চোখে দেখেছেন তাপসবাবু। তাঁর কথায়, “দু’তিন তলা পর্যন্ত কাদা জমে রয়েছে। জানি না ভেতরে মৃতদেহ আটকে আছে কি না। নদীর ধারটা পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে।”
উল্লেখ্য, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক জায়গায় জায়গায় ভেঙে যাওয়ার ফলে এই পর্যটকদল গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন ঘুরপথে। রংপো থেকে মানসং, রামধুরা, লাভা, গোরুবাথান, সেবক হয়ে শিলিগুড়ি নামতে হয়েছে তাঁদের। এর ফলে গাড়িভাড়া বেশ কিছুটা বেশি লেগেছে। কিন্তু তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি এই পর্যটকদলের। গাড়ির চালকের সহায়তাও ভোলার নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
শুভাশিসবাবুর কথায়, “বেড়ানোটা স্মরণীয় হয়ে থাকল। এত বিপদের মধ্যেও আমাদের কোনো বিপদ হল না। সবাই দারুণ ভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন। যে যে জায়গাগুলো যাওয়া হল না, সেগুলো তাড়াতাড়িই ঘুরতে আসব।”