কাশ্মীর বেড়াতে যাচ্ছেন? খুঁটিনাটি এই তথ্যগুলি জেনে নিন

শ্রয়ণ সেন

কাশ্মীর সত্যিই ভূস্বর্গ। জীবনের বত্রিশতম বছরে পড়ে প্রথম বার কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হল আমার। আমি ভেবে পাচ্ছি না যে কেন আগে এখানে আমি আসিনি। যাই হোক, সব কিছুরই তো একটা সময় থাকে। হয়তো সেই কারণেই এত দিন কাশ্মীর যাইনি আমি।

তবে এ বার গেলাম এবং অনেক কিছু তথ্যও সংগ্রহ করে এলাম। আপনারা ভবিষ্যতে যাঁরা কাশ্মীর যাবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, এই তথ্য তাঁদের কাজে লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। একবার দেখে নিন সেই তথ্যগুলি।

১) কাশ্মীরি মানুষজনের কোনো তুলনা নেই। অত্যন্ত অতিথিবৎসল তাঁরা। কাশ্মীরিদের ‘মেহমান নাওয়াজি’ তথা আতিথেয়তা আমি দেখলাম। এক কথায় অসাধারণ। কাশ্মীর বেড়াতে গেলে আপনারা এটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করবেন।

২) কাশ্মীরি মানুষজন যতটাই ভালো, শ্রীনগরের ট্র্যাফিক ততটাই খারাপ। আমি এত বড়ো বড়ো শহরে ঘুরেছি, শ্রীনগরের মতো ট্র্যাফিক জ্যাম কোত্থাও দেখিনি। ডাল লেকের ২৩ নম্বর ঘাট থেকে ৬ নম্বর ঘাটে পৌঁছোতে আমাদের পাক্কা দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছিল।

৩) শ্রীনগরের লোকাল সাইটসিয়িং করার জন্য অন্তত ৮ ঘণ্টা হাতে সময় রাখতেই হবে, সৌজন্যে ট্র্যাফিক।

৪) গুগল ম্যাপে যে সময় দেখায়, সেটা দেখে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। জম্মু থেকে শ্রীনগর ম্যাপে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা দেখাবে। কিন্তু আদতে ১০ ঘণ্টা লেগে যাবে। বিশেষ কিছু জায়গায় প্রবল ট্র্যাফিক জ্যাম হয়। শুধুমাত্র রাম্বানেই ট্র্যাফিকে ঘণ্টাখানেক আটকে থাকতে হবে।

একই ভাবে শ্রীনগর থেকে সোনামার্গ ম্যাপে ৩ ঘণ্টা দেখালেও পিক সিজনে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে।

৫) ফ্লাইটের সুবিধা রয়েছে। তবুও বলব অন্তত একবার জম্মু থেকে শ্রীনগর, অথবা শ্রীনগর থেকে জম্মু সড়কপথে যান। নইলে অসাধারণ কিছু দৃশ্যের থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।

৬) গুলমার্গ, সোনামার্গ, দুধপথরি, আরু ভ্যালি, পাটনিটপ-সহ আরও অনেক জায়গাতেই ঘোড়াওয়ালা আপনাকে বিরক্ত করবেই। আপনি ঘোড়ায় চড়বেন কি চড়বেন না সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে দরাদরিটা ঠিক ভাবে করবেন।

৭) খরচা করতে অসুবিধা না হলে ডাল লেকের পাড়ে নয়, শ্রীনগরে থাকুন রাজবাগ অঞ্চলে। এখানে খুব ভালো ভালো হোটেল আছে। রাজবাগে ঝিলমের পাড় খুব সুন্দর। দারুণ লাগবে। ডাল লেকের পাড় অনেক বেশি ঘিঞ্জি।

৮) একটা দিন থাকুন হাউসবোটে। ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণ অবশ্যই করবেন।

৯) শ্রীনগর শহর রাত সাড়ে ১০টাতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ। নির্ঝঞ্ঝাটে শহরের রাস্তায় বেরোতে পারেন। কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না।

১০) নিরাপত্তারক্ষীতে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা উপত্যকা। ফলে আপনি নিজেকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করবেন। কিন্তু কোথাও কোনো কড়াকড়ি নেই। কিছু কিছু জায়গায় সাধারণ বডি সার্চ হবে, এর বাইরে কিছু নয়।

১১) অনন্তনাগের মার্তণ্ড সূর্য মন্দির, অবন্তিপোরায় অবন্তিস্বামী মন্দির, শ্রীনগরে পরী মহল—এই স্থানগুলি অনেকেই নিয়ে যায় না। একবার আপনার গাড়ি চালকের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলে নিন। এগুলি মিস করবেন না কিছুতেই।

১২) কাশ্মীরে আরও অনেক অফবিট যাওয়া রয়েছে। সেগুলির জন্য আরও একটা বড়ো ট্যুর করা যায়। তবে যে হেতু প্রথম বার আপনি কাশ্মীর যাবেন, তাই আগে চেনা পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরে নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *