এ বারের গঙ্গাসাগর মেলায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে দর্শন, ‘ই-স্নান’-এরও ব্যবস্থা

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়: গঙ্গাসাগর

করোনা আবহেই শুরু হতে চলেছে মেলা। এ বারের মেলাকে পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত করে তুলতে বদ্ধপরিকর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। সকলেই অঙ্গীকারবদ্ধ এ বারের সাগরমেলাকে প্লাস্টিকবর্জিত, পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত মেলা করে তুলতে। মেলাপ্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে শামিল কপিলমুনি মন্দিরের সাধুসন্তরাও।

করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই একাধিক নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কলকাতার বাবুঘাট থেকে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রাপথে কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এ বারে। পাশাপাশি মেলা দর্শন, পুলিশি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমনকি পরিবহণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল মাধ্যমকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে প্রশাসন।

গঙ্গাসাগরে এই প্রথম

দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, অতিমারির জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে দর্শন এবং স্নানের উপরেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এ বছর। ‘ই-স্নান’-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই মেলায় যোগ দেওয়া যাবে। অনলাইনে অর্ডার করলে খুব অল্প মূল্যে তিন দিনের মধ্যে বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হবে গঙ্গাজল, প্রসাদ, ফুল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী।

মেলাপ্রাঙ্গণ সাফাই অভিযান।

প্রসাদ-সহ নানান সামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি ক্যুরিয়ার সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ‘অতিথি পথ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। এই অ্যাপের মাধ্যমে ‘ই-দর্শন’-এর পাশাপাশি মিলবে প্রসাদও।

ট্রেন, বাস, ভেসেলের সময়সূচি, সাগরমেলা সম্পর্কে তথ্য, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যবস্থার তথ্যও পাওয়া যাবে এই অ্যাপে। শুধু অ্যাপই নয়, ই-স্নানের জন্য প্রশাসনের তরফে পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে সরাসরি পুজো এবং স্নান সম্প্রচার করা হবে।

আইটি ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে এ বারের মেলার যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সে দিকে লক্ষ রেখেই ‘পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে। জিপিআরএসের মাধ্যমে মাধ্যমে পুলিশ-প্রশাসন বাস এবং ভেসেলের সঠিক অবস্থান, যাত্রীর সংখ্যা এবং চালকের ফোন নম্বর জানতে পারবে।

ইতিমধ্যেই বাস এবং নদীপথে ট্রলারের রুট ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে যাত্রীদের ভিড়ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করছে প্রশাসন। এমনকি ভেসেল চলাচলের সময় নদীর গভীরতাও নিয়মিত মাপা সম্ভব হবে। ফলে এ বছর ২০ ঘণ্টাই ভেসেল চলাচল করতে পারবে বলে মনে করছেন জেলাশাসক পি উলগানাথন।

করোনা মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা

কোভিডের সংক্রমণ এড়াতে মেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ এবং যাত্রাপথের ঘাটগুলিতে স্যানিটাইজার ট্যানেল বসানো হবে। মেলায় প্রবেশের আগে প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে তীর্থযাত্রীদের হাতে একটা করে ব্যাজ লাগিয়ে দেওয়া হবে।

তবে কোনো ব্যক্তির দেহে উষ্ণতা বেশি থাকলে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হবে। প্রয়োজনে আরটিপিসিআর টেস্টও করানো হবে। কোনো যাত্রীর দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেলে তাঁকে সেফ হোম এবং হাসপাতালে পাঠানো হবে।

মেলায় করোনা সংক্রান্ত সব তথ্য ‘কোভিড ওয়াচ’ পোর্টালেও আপলোড করা হবে।

কিউআর কোড

মেলায় এসে শিশু এবং বৃদ্ধরা যাতে হারিয়ে না যায়, সে দিকে লক্ষ রেখেও আরেকটি উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। মেলায় ঢোকার আগে প্রত্যেক শিশু এবং বৃদ্ধদের হাতে কিউআর কোড-সহ একটি ব্যাজ লাগানো থাকবে। কোড স্ক্যান করেই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে সব তথ্য জানা যাবে।

শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাজারের বেশি সিসিটিভি বসানো হচ্ছে মেলাপ্রাঙ্গণে। ওড়ানো হবে অসংখ্য ড্রোন। মেলার জন্য পাঁচটি কনট্রোল রুম এবং ১০টি বাফার জোন থাকবে। সব মিলিয়ে করোনা আবহেই মেলার জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত প্রশাসন।

আরও পড়ুন: দোরগোড়ায় গঙ্গাসাগর মেলা, স্বাস্থ্যসুরক্ষায় নানা উদ্যোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *