গ্রামে গ্রামে হামলা আটকাতে হাতিদের জন্য বিশেষ খাদ্য ভাণ্ডার বানানোর পরিকল্পনা বন দফতরের

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে বাংলায় হাতির সংখ্যা প্রায় ৭০০। দুই প্রান্তেই মাঝেমধ্যেই এখনও হাতিকে খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। খাবারের খোঁজে ঢুকে পড়তে হয় লোকালয়ে। নষ্ট হয় মাঠের ফসলও। হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর খবরও নতুন নয়।

এটা যাতে আর না হয় সে জন্য আটঘাট বেঁধে নামছে বন দফতর। রাজ্য বন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ‘ভাণ্ডারা’ (খাদ্য ভাণ্ডার)। এর ফলে হাতিকে হয়তো আর খাবারের খোঁজে গ্রামে গ্রামে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না।

লোকালয়ে হাতিদের উৎপাতের আতঙ্ক কমানোর জন্য জঙ্গলের মধ্যে ভাণ্ডারা তৈরি করবে বন দফতর। সেখানে থাকবে হাতিদের সব পছন্দের খাবার। কলা, তরমুজ, মরশুমি সবজি-সহ মোট ৩৯ রকমের খাবার। এমনকি সেখানে হাতিদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থাও থাকবে।

একই সঙ্গে, বন্যপ্রাণীদের যাতায়াতের জন্য মোট ১৪টি করিডোরও তৈরি করা হবে। আপাতত ৭টি করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করেছে বন দফতর। বন্যপ্রাণীদের যাতায়াতের পথে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়, তাই এই পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বন দফতর।

রাজ্যে এখন হাতির সংখ্যা ৭০০ পেরিয়েছে। তাই হাতির খাবারের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই খাদ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। এতে শুধু যে রাজ্যে হাতির উপকার হবে, তা নয়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন গ্রামবাসীরাও। ঝাড়খণ্ড থেকে খাবারের খোঁজে হাতি প্রায়শই দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় ঢুকে পড়ে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জঙ্গলে মাঝেমধ্যেই হাতির উপদ্রব দেখা যায়। বিপদ তখনই বাড়ে, যখন তারা জঙ্গলের পথ ধরে লোকালয়ে প্রবেশ করে।

দাঁতালদের তাণ্ডবে ফসল নষ্ট হয়। আবার অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া হাতির হানায় মানুষের মৃত্যুর খবরও নতুন নয়। মানুষের ক্ষতি করার জন্য হাতিরা লোকালয়ে প্রবেশ করে না। তারা সন্ধান করে খাবারের। তাই বিপদ রুখতে আর হাতি বাঁচাতে এই ভাণ্ডারা তৈরির পরিকল্পনা।

জঙ্গলের মধ্যেই যাতে হাতিরা পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে যায়, তার জন্য প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি এলাকায় ভাণ্ডারা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে লালগড়, বেলপাহাড়ি এবং তপোবন এলাকা সংলগ্ন জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গা। এই সব জায়গায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বৈদ্যুতিক তারের ফেন্সিংয়ের ভিতরে থাকবে এই ভাণ্ডারা। কলাগাছ থেকে শুরু করে তরমুজের খেত, চালতার গাছ—সব কিছুই থাকবে সেখানে। হাতিদের জন্য সেখানে চাষ করা হবে মরশুমি সবজিও। সব মিলিয়ে ৩৯ রকমের খাবার থাকবে এই ভাণ্ডারায়। সেখানে জলাশয়ও তৈরি করা হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।

বন্যপ্রাণীদের যাতায়াতের জন্য যে করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার এক-একটি প্রায় সাত-আট কিলোমিটার লম্বা হবে। এই করিডোরগুলো মূলত উত্তরবঙ্গেই তৈরি করা হবে। দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও কয়েকটি করিডোর তৈরি করা হবে।

প্রথম করিডোরটি তৈরি করা হবে জলদাপাড়া থেকে বক্সা পর্যন্ত। বক্সার জঙ্গলে প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো হাতি থাকে, যদিও তাদের আবাসস্থল যে বক্সা তা নয়। বক্সা থেকে ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে মেঘালয়েও চলে যায় হাতিরা। আবার আশেপাশের অন্য জঙ্গল থেকেও হাতিরা বক্সায় আসে। তাই বন্যপ্রাণ সুরক্ষার জন্য এবং মানুষও যাতে নিরাপদে বাস করতে পারে, তার জন্য এইই ভাণ্ডারা ও করিডোর তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *