ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: কার্শিয়াং মহকুমা এলাকায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে রাজারানি পাহাড়। মহানন্দা অভয়ারণ্যের ভিতরে প্রায় চারশো বছর আগে সেই পাহাড়ে তৈরি দুটি প্রাকৃতিক গুহায় কিছু দিন আত্মগোপন করেছিলেন লেপচাদের রাজা ও রানি। এমনই বিশ্বাস লেপচাদের।
অন্দরে প্রায় কুড়ি তলা সমান পাহাড়ের বিশাল চাঁই। রক ক্লাইম্বিং ছাড়া সেখানে পৌঁছোনো কার্যত অসম্ভব। এত প্রতিকূলতার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার কলকাতার একটি অভিযাত্রী দল সেটি পুনরাবিষ্কার করলেন। পুনরাবিষ্কারই, কারণ আটের দশকে শিলিগুড়ির কয়েক জন যুবকও গুহাটির সন্ধান পেয়েছিলেন।
কিন্তু প্রচারের অভাবে তা আর লোকসমক্ষে সে ভাবে উঠে আসেনি। মসৃণ পাথরের গোলাকার গুহার ভিতরটি অসম্ভব সুন্দর। এক একটি গুহায় কয়েক জন মানুষ অনায়াসে বাস করতে পারেন। কিন্তু কোনো লেপচা রাজা কিংবা রানি সেখানে বাস করেছিলেন কি না, তার আর কোনো তথ্য জানার সম্ভাবনা নেই।
লেপচাদের ইতিহাসের অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে হওয়ার অন্যতম কারণ, ভুটান রাজাদের বারংবার আক্রমণ। শেষ পর্যন্ত সমগ্র কালিম্পংই দখল করে নিয়েছিলেন ভুটান রাজারা। সে সময়ে নষ্ট করে দেওয়া হয় লেপচাদের পুথি ও নথি। রাজারা পরিণত হন সামান্য ভূস্বামীতে।
দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ছেড়ে তাঁদের ঠিকানা হয় গোরুবাথান লাগোয়া ডালিম ফোর্টে। কিন্তু আজ থেকে চার-পাঁচশো বছর আগে উত্তরবঙ্গের এই পাহাড়ি এলাকার ইতিহাসের অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে গুহাদুটির পুনরাবিষ্কারে।
একটি গুহার নাম গুলমা রাজা। অন্যটির নাম গুলমা রানি। লেপচা ভাষায় গুলমার অর্থ ‘আত্মগোপন করে থাকা মানুষ।’ কার্শিয়াং মহকুমার লাটপানচার এলাকাটি এমনিতেই রহস্যময়। মহানন্দা অভয়ারণ্য, প্রাকৃতিক পুকুর বা পোখরি, মানুষের অগম্য জঙ্গল ও পাহাড় মিলিয়ে একটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত দেব মণ্ডল, শুভজিৎ পাল, আশিস চন্দ, সৌরভ দাস এবং ঋভু দাস কলকাতা থেকে এসেছিলেন উত্তরবঙ্গে। পরদিন তাঁরা ঘাঁটি গাড়েন লাটপানচারে। এর পর তাঁরা গুহাদুটি খুঁজে বার করার কাজে নামেন। কুহি ব্লকের রাজারানি পাহাড়কে কেন্দ্র করে গুহার খোঁজ শুরু হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ পর্যন্ত তাঁরা গুহাদুটির সন্ধান পান।
কলকাতার অভিযাত্রী দলের এই সাফল্যে খুশি বন দফতরও। তাঁদের কাজের জন্য অভিযাত্রী দলকে শুভেচ্ছা জানান অ্যাসোসিয়েশন অব কনজারভেশন অব ট্যুরিজমের কর্ণধার রাজ বসু। আশির দশকে প্রথম এই গুহাটিকে খুঁজে বার করেছিলেন রাজ বসু সহ একদল উত্তরবঙ্গের যুবক।