নিজস্ব সংবাদদাতা: পর্বতারোহী, অভিযাত্রী, ভ্রামণিক, লেখক বিদ্যুৎ সরকার প্রয়াত হলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬। বাংলার পর্বতপ্রেমীদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ‘ছোড়দা’ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ কল্যাণীতে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার পর্বতপ্রেমী মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
কোনো আট-হাজারি শৃঙ্গ জয়ের কৌলিন্য বিদ্যুৎবাবুর ছিল না। কিন্তু তাঁর নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন বাংলার আপামর পর্বতপ্রেমী থেকে শুরু করে হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা গ্রামবাসী বা পোর্টার।
আরও পড়ুন জানুয়ারির শেষেই কলকাতা-তারাপীঠ এসি বাস পরিষেবা, জানাল এসবিএসটিসি
বিদ্যুৎ সরকার প্রথম ভারতীয় হিসাবে ১৯৮০ সালে ট্রান্স হিমালয়ান ট্র্যাভার্স অভিযান করেছিলেন। পূর্বে অরুণাচল থেকে উত্তরে কাশ্মীরের লেহ পর্যন্ত মোট ২৪০০ কিলোমিটার পথ আট মাসে হেঁটে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সকলের। ১৯৭৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আরোহণ করেছিলেন উজা তিরচে (৬২০৩ মিটার), ১৯৭৭ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আরোহণ করেছিলেন বাম্বা ধুরা (৬৩৩৪ মিটার)।

এ সব তো গুটিকতক হিসেব মাত্র। এই হিসেব দিয়ে আসল মানুষটিকে মাপা যায় না। আসলে সারা হিমালয় জুড়েই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর কাছে হিমালয় মিটার বা ফুটে মাপা কোনো টার্গেট ছিল না। হিমালয় ছিল তাঁর একমাত্র প্রেম। অসংখ্য জনপ্রিয় ট্রেক রুটের জনক তিনি। তবুও এতটুকু অহংকার ছিল না তাঁর। তাঁর সাফল্যগুলির কথা তাঁর সামনে বললে তিনি শুধু বলতেন, “আমি হিমালয়ে যাই ভালোবেসে, নাম কামানোর জন্য থোড়ি যাই। হিমালয় আমার মামাবাড়ি।”
কয়েক বছর আগেও তাঁকে শুশুনিয়া, মাঠাবুরু কিংবা বেড়োর রক ক্লাইম্বিং কোর্সে কচিকাঁচাদের সঙ্গে দেখা যেত। আশির দশকে শুশুনিয়ায় সান্ধ্যকালীন ক্লাসে ছোড়দা বলেছিলেন, “তুমি যদি মনে কর ওখানে পৌঁছোনো (শৃঙ্গারোহণ) অসম্ভব, তা হলে নেমে এস। কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি যে ওখানে যেতেই হবে।” তাঁর এই কথা আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন তাঁর ছাত্ররা। তিনি চেয়েছিলেন সবাই উপভোগ করুন হিমালয়ের সৌন্দর্য্য, অন্তর দিয়ে অনুভব করুন হিমালয়ের দেওয়া শিক্ষা। যা দিয়ে সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায় জীবনের যে কোনো সমস্যা। হিমালয়ের পাথরে বরফে অমর হয়ে রইল তাঁর ফেলে আসা পায়ের ছাপ।
কলকাতার ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম, নীলকণ্ঠ প্রভৃতি সংস্থার তরফ থেকে বিদ্যুৎ সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।