মুকুট তপাদার
পর্ব ২
বাংলার রাঢ় অঞ্চলটির নাম তখন লাড় দেশ। এখানে একাধিক বণিক শ্রেণীর বসবাস ছিল। অজয় নদ ধরে বাণিজ্য চলতো। দেউলী জনপদের কাছেই এক বন্দর নগর গড়ে ওঠে। সুপুর বন্দর। কার্পাস, রেশম, পশম, তসর, নীল, লাক্ষা প্ৰভৃতি নানা পণ্যদ্রব্য বন্দরে রপ্তানি হত। প্রাচীনকালে সুপুরে বাস করতেন রাজা সুবাহু। পরবর্তীতে অজয় নদ দিয়ে বহু জমিদার এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। তারা গৃহ ও মন্দির নির্মাণ করে থাকতে শুরু করেন। চারপাশে আজও পুরনো ইঁট, ভগ্ন স্তুপ, পোড়া মন্দির দেখলে জায়গাটির প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
নদের নাব্যতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলে বন্দরটিও হারিয়ে যায়। এই বন্দর নগরের কাছেই দেউলী জনপদটি। বোলপুর থেকে দশ কিলোমিটার দূরত্ব।
দেউলী নামের বিশেষ একটি কারণ আছে। এখানকার দেউল রীতি মন্দির দেউলেশ্বর। তিনি হলেন শ্রী শ্রী মহাদেব ঠাকুর। দেউলেশ্বর থেকে দেউলী। বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে দেউল অন্যতম। আকৃতিগতভাবে গঠন উড়িষ্যার ‘রেখ দেউল’।

বাংলার বহু পোড়ামাটির মন্দিরগুলো যেভাবে অবহেলায় একটু একটু করে হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমন এই দেউল মন্দিরটিও একই রকম অবস্থায়। দেউলে প্রবেশ দ্বারটির চারদিক দিয়ে পোড়ামাটির সূক্ষ্ম কাজগুলো দেখে সেকালের শিল্পীর নৈপুণ্যতা মুগ্ধ করে। তবে উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে কাজগুলো সেভাবে রক্ষা করা যায়নি। সামান্য কিছুই অবশিষ্ট আছে।

দেউলের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অজয় নদ। গঠনশৈলীর দিক কিছু সংখ্যক আজ টিকে আছে। সুউচ্চ মিনারটি গ্রামে দূর থেকে দেখা যায়। আর নদী পথ ধরে গেলেও অনেকটা দূর থেকে চোখে পড়ে। গ্রামে এই একটিই আছে।
(চলবে)