ভ্রমণ-সংস্কৃতিভ্রমণের খবর

ছ’জন ভারতীয়ের ক্যামেরায় বন্দী রাশিয়াকে দেখতে চলুন গোর্কি সদন

শ্রয়ণ সেন

 স্বপ্ন দেখেন, বইতে পড়া রাশিয়ার সেই বিখ্যাত বৈকাল হ্রদকে চাক্ষুস করতে? কিংবা নর্দান লাইটস বা সুমেরুজ্যোতি উপভোগ করতে, অথবা রাশিয়া তথা ইউরোপের সর্বোচ্চ মাউন্ট এলব্রুসকে নিজের ক্যামেরায় বন্দি করতে?

বাঙালি মানেই ভ্রমণপিপাসু। অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে একবার অন্তত রাশিয়াটাকে নিজের চোখে দেখার স্বপ্ন জাগবেই। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, রাশিয়া যাওয়া তো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। যাওয়ার পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই, সে আর্থিক হোক বা অন্য কিছু।

 

কিন্তু এই সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে রাশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন ওরা ছ’জন। রতনলাল বিশ্বাস, রথীন চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ দে, পীযূষ রায়চৌধুরী, প্রশান্ত মণ্ডল এবং অপূর্ব বণিক। সবাই এক সঙ্গে নয়, গত দু’বছরে আলাদা আলাদা ভাবে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের চোখে রাশিয়া কেমন, সেটাই ফুটে উঠেছে গোর্কি সদনের প্রদর্শনী হলে।

এই ছ’জনের তোলা ছবি নিয়ে মঙ্গলবার গোর্কি সদনে শুরু হল একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী। রাশিয়ান সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচার এবং ভ্রমণ লেখকদের সংগঠন ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর নাম ‘রাশিয়া থ্রু ইন্ডিয়ান আইজ।’ এই প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্‌বোধন করেন কলকাতায় রাশিয়ার কনসাল জেনারেল আলেক্সি ইদামকিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি কনসাল জেনারেল মিখাইল গুসেভ এবং প্রখ্যাত আলোকচিত্রগ্রাহক তথা অধ্যাপক বিশ্বতোষ সেনগুপ্ত।

এ রকম একটা প্রদর্শনী করার জন্য রাশিয়ান সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচারের তরফ থেকে ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরামের কাছে আবেদন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথাগুলিই বলেন সংগঠনের সম্পাদক রথীন চক্রবর্তী।

রথীনবাবুর কথায়, “গত দু’বছরে ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরামের সদস্যরা রাশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। এক দিকে তাঁরা সুমেরুজ্যোতি প্রত্যক্ষ করেছেন, অন্য দিকে মাউন্ট এলব্রুসে উঠেছেন। কেউ কেউ বরফে জমে যাওয়া বৈকাল হ্রদের ওপর দিয়ে ট্রেক করেছেন, চূড়ান্ত ঠা্ন্ডায় সাইবেরিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। সদস্যদের ক্যামেরায় যে সব ছবি বন্দি হয়েছে সেগুলি নিয়ে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করার ব্যাপারে আমাদের আবেদন জানিয়েছিল রাশিয়ান সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রদর্শনী হল। দু’দিনই বিশেষ স্লাইডশোও দেখানো হবে। বুধবার দেখানো হবে বিদ্যুৎ দে এবং পীযূষ রায়চৌধুরীর তৈরি করা স্লাইড, বৃহস্পতিবার দেখানো হবে রতনলাল বিশ্বাস এবং প্রশান্ত মণ্ডলের স্লাইড।

ঐতিহাসিক একটা সন্ধিক্ষণে আয়োজিত হয়েছে এই প্রদর্শনী। ১৯৭১-এর এই আগস্টেই ভারত-রাশিয়ার সেই বিখ্যাত বন্ধুত্বের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। নির্জোট আন্দোলনের অন্যতম মুখ ভারতের এই চুক্তি অনেকের ভ্রূ কুঁচকেছিল ঠিকই, কিন্তু তার পরেই শুরু হয়েছিল এক ঐতিহাসিক সম্পর্কের। নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথাগুলিই বলেন ইদামকিন। বন্ধুত্ব শুরু হওয়ার মাসে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী দু’দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলবে বলে মনে করেন তিনি।

আসলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারত এবং অনেকাংশে কলকাতার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক বাতাবরণই যে সেই সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন অবশ্য দু’প্রান্তেরই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে, কিন্তু রয়ে গিয়েছে সেই আত্মিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার বার্তাই এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিলেন আগত অতিথিরা।

সব মিলিয়ে গোর্কি সদনের প্রদর্শনী হল এখন রাশিয়াময়। আগামী দু’দিন আপনাদেরও গন্তব্য হয়ে উঠুক এই হল।

4 thoughts on “ছ’জন ভারতীয়ের ক্যামেরায় বন্দী রাশিয়াকে দেখতে চলুন গোর্কি সদন

  • Bidyut Dey

    Bhromononline ke osongkho dhonnobad

    Reply
    • BhramonPost author

      dhonnobad…. bhramonline dekhte thakun

      Reply
  • Rathin Chaktaborty

    Thanks for your excellent presentation

    Reply
    • BhramonPost author

      dhonnobad

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *