পর্ব ৫
মুকুট তপাদার
সমগ্র এশিয়ার প্রাচীনতম দুর্গামূর্তি দেউলী গ্রামে। অজয় নদীর পাড়ে পার্বতী মন্দির। যার লোকমুখে প্রচলিত নাম খ্যাঁদা পার্বতী। গবেষকরা মনে করেন মূর্তিটি পাল যুগের সময়কার। প্রস্তরমূর্তিটি গ্রামবাসীদের কাছে জাগ্রত দেবী। জনপ্রিয় ধারণা অনুযায়ী আছে বহু রহস্য। গোটা গ্রামে কোথাও দুর্গোৎসব হয় না। শরৎকালে এই প্রস্তরমূর্তিকে শাস্ত্র মতে পুজো করা হয়। নবমীর দিন হয় বিশেষ পুজোপাঠ।

বৃহৎ বঙ্গে পাল যুগের সময়কার ভাস্কর্য শিল্প চরম শিখরে পৌঁছায়। শিল্পকর্মে ধর্মীয় চিন্তাভাবনার পাশাপাশি সেকালের শিল্পীদের অবিশ্বাস্য কাজ আশ্চর্য করে। নিজস্ব উৎকীর্ণ সৃষ্টির মধ্যে থাকে যেন শিল্পের জাল বোনা। যদি শিল্পানুরাগী হন, তবে আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে!
দেউলীর মূর্তি পাল রাজা নয় পালের আমলে নির্মিত মনে করা হয়। ঐতিহাসিকরা জায়গাটি পরিদর্শন করে এমনই তথ্য দেন। তার রাজত্বকাল ছিল ১০৩৮ থেকে ১০৫৫ খ্রিস্টাব্দ। তিনি প্রথম মহিপালের পুত্র। এমন প্রস্তরমূর্তি আরো আটটি ছিল জানা যায়। বর্তমানে সেই সময়ের মূর্তি এই একটি আছে।
পাদপীঠের ওপর মূর্তিটি। নিচে মহিষের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে মহিষাসুর। বামদিকে শার্দুল। মূর্তির পিছনের অংশে দুইদিকে আছেন অপ্সরা। মাথায় কীর্তিমুখ, শক্তির প্রতীক।

কালাপাহাড়ের হাত থেকেও রেহাই পায়নি পাল যুগের এই ভাস্কর্য। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে একাধিক মন্দিরে আক্রমণ চালিয়ে উন্মত্ত অবস্থায় এলেন এখানে। মূর্তিটির ক্ষতিসাধন করলেন। নাকের সামনের অংশটি তরবারির কোপে দিলেন ভেঙে। করলেন লুটপাট। সেই কালাপাহাড়ের আক্রমণের পর থেকে দেউলী গ্রামে দেবীর নাম হয় খ্যাঁদা পার্বতী।
কিভাবে যাবেন :
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে বোলপুর। সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে দেউলী গ্রাম। বোলপুর থেকে টোটো বা গাড়ি বুক করে ঘুরে নিন।
(সমাপ্তি)