বীরভূম তন্ত্রপীঠ ও সিদ্ধপীঠ নিয়েই ভরপুর। এই জায়গাতেই তান্ত্রিক ধর্মের সবচেয়ে বেশি প্রভাব। সতীর পাঁচটি দেহাংশ বীরভূমে পড়েছিল। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম পাঁচটি হলো নলাটেশ্বরী, নন্দীকেশ্বরী, বক্রেশ্বর, কঙ্কালীতলা ও ফুল্লরা।
“লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর! দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
নাচে তারা উন্মাদ তান্ডবে; মৃত্যুরূপা মা আমার আয়!”
পীঠনির্ণয় তন্ত্রে উল্লেখিত যে, দক্ষযজ্ঞের সময় বিষ্ণু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ৫১টি অংশে কেটে ফেলেছিলেন। যেখানে দেহের অংশ পড়েছিল সেই জায়গাতে গড়ে ওঠে সতীপীঠ। বীরভূমে আছে পাঁচটি সতীপীঠ। আলোচনা করা হলো, নিচে দেখুন।

নলাটেশ্বরী :
বীরভূম জেলার নলহাটিতে অবস্থিত নলাটেশ্বরী মন্দির। নল রাজার নাম থেকে জায়গাটির নাম হয় নলহাটি। এখানে সতীর নলা বা গলার নালী পড়ে। চারচালা মন্দির স্থাপত্য। গর্ভগৃহে পাথরের উপর বসানো আছে তিনটি চোখ ও সোনার জিভ। সারা বছর কালী রূপে পূজিত হন। দুর্গাপূজোর সময় দেবীকে চার দিন দুর্গা রূপে পুজো করা হয়।
নন্দীকেশ্বরী :
বীরভূম জেলার সাঁইথিয়ায় নন্দীকেশ্বরী মন্দির। এখানে সতীর কন্ঠহার পড়েছিল। অতীতে এক বটবৃক্ষের নিচে দেবী প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। পরে এক স্থানীয় জমিদার স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দির গড়ে দেন। ঘন জঙ্গলের মধ্যে একসময়ে তান্ত্রিকদের সাধনক্ষেত্র ছিল। কথিত আছে, সাধক বামাক্ষ্যাপা এখানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। কালীপুজোর সময় মন্দিরে বিশেষ পুজো হয়।
বক্রেশ্বর :
বীরভূম জেলায় পাপহারা নদীর তীরে অবস্থিত বক্রেশ্বর সতীপীঠ। একাধারে এই জায়গা শৈব তীর্থ বটে। এখানে দেবীর দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী অংশটি মন পড়েছিল। বক্রেশ্বরে পাঁচটি শিবলিঙ্গ আছে। দেবীর দশভূজা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। পূণ্যলোভে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ আসেন। বক্রেশ্বরের কুন্ড ও উষ্ণ প্রস্রবণে ডুব দিয়ে স্নান করেন। তান্ত্রিক, সাধক, বাউলের দর্শন এখানে আসলে সব সময় পাওয়া যায়।
কঙ্কালীতলা :
বীরভূম জেলার বোলপুরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলা সতীপীঠ। শান্তিনিকেতনের খুব কাছেই অবস্থিত। এখানে সতীর কাঁখাল পড়ে। কুণ্ডের জলে নিমজ্জিত কাঁখাল অংশটি। সারাবছর পূণ্য কুণ্ডটি পুজো হয়। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। ছবিতে পুজো করা হয়। পৌষ সংক্রান্তি ও কৌশিকী অমাবস্যায় খুব জাঁকজমক ভাবে এখানে পুজো হয়।
ফুল্লরা :
বীরভূম জেলার লাভপুরে ফুল্লরা সতীপীঠ। এখানে দেবীর ঠোঁট পড়েছিল। সিঁদুর মাখানো শিলাখণ্ডকে পুজো করা হয়। কথিত আছে, মন্দিরের পাশে পুষ্করিণী থেকে শ্রীরামচন্দ্র ১০৮টি পদ্মফুল সংগ্রহ করেন। এখানে এক বিশেষ রীতি আছে। পঞ্চমুন্ডির আসনে সকলে শঙ্খ দিয়ে মানত করেন।
কিভাবে যাবেন :
হাওড়া অথবা শিয়ালদা থেকে ট্রেনে রামপুরহাট স্টেশন আসুন। সেখান থেকে সোজা নলহাটি চলে যান। নলাটেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে ট্রেন ধরে সাঁইথিয়া চলে আসুন। স্টেশনের কাছে নন্দীকেশ্বরী মন্দির দর্শন করে একটি সংরক্ষিত গাড়ি ভাড়া নিয়ে বক্রেশ্বর, কঙ্কালীতলা ও ফুল্লরা ঘুরে নিন।