শারদীয় ঐতিহ্যে ৬০০ বছরের সাক্ষী, নদিয়ার শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির একচালা দুর্গাপুজো
শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবীপুরাণ মতে একচালা ঠাকুরের মৃন্ময়ী রূপের পূজা হয় এখানে। একচালা প্রতিমায় লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের অনুপস্থিতি এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সাড়ে চারশো বছরের গণ্ডি পেরিয়েছে অনেক আগে। কারও মতে, ইতিহাস আরও পুরনো—৬০০ বছরেরও বেশি। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে জমিদারির ঐশ্বর্য, কিন্তু প্রথা ও নিষ্ঠা আজও টিকে আছে নদিয়ার শান্তিপুরের তর্কবাগীশ লেনের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজোয়।
আদতে চৈতল মাহেশের বংশধর চট্টোপাধ্যায় পরিবার বিহারের গয়ার যদুয়াতে জমিদার ছিলেন। এই পরিবারের পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ আমলে পান ‘তর্কবাগীশ’ উপাধি। প্রজাদের সমস্যা মেটানোর জন্য তাঁকে ‘জজ পণ্ডিত’ নামেও ডাকা হত। পরে পরিবারটি শান্তিপুরে চলে আসে এবং এখানেই শুরু হয় দুর্গার আরাধনা।
একচালার প্রতিমা, প্রাচীন রীতি
এখানে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে একাই বিরাজ করেন। পরিবারের সদস্যরাই দেবীর পূজার্চনা করেন। বোধন হয় ঠাকুরবাড়ির কাছে পঞ্চবটি আসনে। মায়ের পাদদেশে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন, সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। পঞ্চবটি ও পঞ্চমুণ্ডির একত্র উপস্থিতি বাংলার পুজোয় বিরল দৃশ্য।

বলি থেকে ভোগের আচার
একসময় নবমীর দিনে ১০৮ মোষ ও ২৮ পাঁঠা বলি হত। এখন প্রতীকী কুমড়ো বলি হয়। দশমীতে মায়ের ভোগে থাকে পান্তা ভাত।
- সপ্তমীর দিন: নিরামিষ ভোগ
- অষ্টমীর দিন: ইলিশ মাছ
- নবমীর দিন: কচুশাকসহ ১৭ রকম পদ
উৎসবের আবহ
আগে নবমীতে নাটমন্দিরের মাঠে কর্দমাক্ত উৎসব ও ফানুস উড়ানোর আয়োজন ছিল। এখন তা নেই, তবে ডগরের বাজনায় সেই ঐতিহ্যের ঝলক এখনও পাওয়া যায়।
সাহিত্যিকদের স্মৃতি
এই পুজোয় একসময় এসেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের জামাতা ছিলেন কবি ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (শোককাব্য ‘অশ্রু’ খ্যাত)। তাঁর প্রপৌত্র ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভোলানাথের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রে বিভূতিভূষণ এসেছিলেন এই পুজোয়।
ড. সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বাড়িতে দুর্গাপুজো আসলে এক মিলন উৎসব। পরিবারের সবাই একত্রিত হন, আর প্রথা-রীতির মধ্য দিয়েই আজও দেবীর পুজো হয়।”
কী ভাবে যাবেন
ট্রেন – শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল → শান্তিপুর স্টেশন → টোটো/রিকশা → ডাকঘর মোড়।
বাস – কলকাতা থেকে শান্তিপুর বাস → ডাকঘর স্টপেজ/বাইপাস → টোটো/রিকশা।
গাড়ি – এনএইচ-১২ হয়ে রানাঘাট হয়ে শান্তিপুর → ডাকঘর মোড়।