মোটরবাইকে চলুন, বেছে নিন এই পাঁচটির মধ্যে কোন পথে যাবেন

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: একটা বিশেষ দিন আজ রবিবার ২১ জুন। ১৯৮২ সালের পরে আজ একই দিন হচ্ছে সূর্য গ্রহণ এবং ‘সামার সলস্টিস’ অর্থাৎ নিরক্ষরেখা থেকে কর্কটক্রান্তি রেখায় সূর্যের দূরতম অবস্থান। সোজা কথায় আজ দিন সব চেয়ে বড়ো, রাত সব চেয়ে ছোটো। কাল থেকে আবার দিন একটু একটু করে ছোটো হবে, রাত একটু একটু করে বড়ো হবে। আর এই দিনেই পড়েছে বিশ্ব মোটরসাইকেল দিবস

কথায় বলেও চার চাকায় দেহের নাড়াচাড়া হয়, আর দু’ চাকায় আত্মার নাড়াচাড়া হয়। যা-ই হোক, আত্মাই হোক বা দেহ, এ বছর তো সব নড়াচড়া বন্ধ। ঘরবন্দি আমরা করোনাভাইরাসের জেরে। লকডাউন পর্ব শিথিল করে আনলক পর্ব শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে বাড়ি থেকে বেরোনোই বন্ধ। সুতরাং ‘উঠল বাই, তো কটক যাই’ করে দু’ চাকার বাহনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়া চলবে না। কিন্তু শারীরিক ভাবে না বেরোতে পারলেও মানসিক ভাবে বেরিয়ে পড়তে দোষ কী? কিন্তু কোন পথ ধরবেন? আসুন তারই সন্ধান করা যাক।

ভারতের পাঁচটা সব চেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় মোটরবাইক পথের হদিশ দেওয়া যাক –

মানালি থেকে লেহ

এই পথ শুধু জনপ্রিয় বা দৃষ্টিনন্দনই নয়, এই পথ আত্মাকেও তৃপ্ত করে। প্রতিটি বাঁকে যেন নতুন কিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্য, আগের চেয়ে আরও আকর্ষণীয়। পথের দৈর্ঘ্য ৪৯০ কিমি। হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে যাত্রা শুরু করুন, জিসপা-সরচু-উপশি হয়ে লেহ চলুন।

পথে রাত্রিবাস করুন সরচুতে। পরিবেশ, আবহাওয়া, আর তাপমাত্রার সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে দিন। পাকা ও কাঁচা পথের সংমিশ্রণ এই রুট। গোটা পথে তুষারধবল পর্বতশৃঙ্গ আপনার সঙ্গী থাকবে। পথের শীর্ষতম বিন্দু হল তাগলাং লা, ১৭৪৮০ ফুট। এ পথে যাত্রা যেন তীর্থযাত্রা।

মুম্বই থেকে গোয়া

একেবারে সপ্তাহান্তিক রোড ট্রিপ। সব চেয়ে ভালো হয় এই রুটে যদি বর্ষা বা তার ঠিক পরে যাওয়া হয়। দু’ পথে যাওয়া যায় গন্তব্যে – এক, ৪ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা ৪৭ নম্বর এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে। পথে পড়বে পুনে, সাতারা, কোলহাপুর, আমবোলি। দূরত্ব পড়ে ৫৭১ কিমি। এটাই বেশি কমন রুট। ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি বিশ্রাম নেওয়া যায়, রাত কাটানো যায়।

দ্বিতীয় পথটি হল পশ্চিমঘাট পর্বতমালা চিরে, ৬৬ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে। সবুজের সমারোহ এই পথে, বর্ষায় তো এর রূপ আরও খোলে। পথে পড়বে পানভেল, কোলাড, চিপলুন, সাওয়ন্তওয়াড়ী। দূরত্ব পড়ে কিছু কম, ৫৫১ কিমি। দক্ষিণ মহারাষ্ট্রের সমুদ্রসৈকতগুলো আপনাকে গোয়ার কথা ভুলিয়ে দেবে।

জোধপুর হয়ে জয়পুর থেকে জৈসলমের  

পর্বতে যাবেন না, সমুদ্র উপকূল বরাবরও নয়? তা হলে চলুন মরুদেশ রাজস্থানে। দু’ চাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন জয়পুর থেকে জৈসলমেরের পথে। যদি সোজা পথে আসেন অর্থাৎ নাগৌর, ফালোদি, রামদেওরা, পোখরান হয়ে তা হলে দূরত্ব পড়বে ৫৫৮ কিমি। আর যদি জোধপুর দিয়ে ঘুরে আসেন তা হলে দূরত্ব পড়বে ৬৩৪ কিমি। এ পথ তুলনাহীন, পথের দু’ পাশে ধু ধু মরুপ্রান্তর। পথে দু’টো দিন কাটিয়ে যান জোধপুরে, ভালো করে দেখুন শহরটাকে। আর আমাদের পরামর্শ, এ পথে বেরোবেন শীতে, যখন দিনের তাপমাত্রা উপভোগ করতে পারবেন।

গুয়াহাটি থেকে চেরাপুঞ্জি

উত্তরপূর্ব ভারতে প্রচুর সড়কপথ আছে, যা আপনার মোটরসাইকেল যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে পারে। তবু আমাদের পরামর্শ, গুয়াহাটি থেকে চেরাপুঞ্জির পথে যাওয়ার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই পথ। গুয়াহাটি থেকে শিলং যান ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে। এটি খুব জনপ্রিয়, চিত্তাকর্ষক পথ। কিন্তু শিলং ছাড়িয়ে চেরাপুঞ্জির পথ ধরলেই আপনি অভিভূত হয়ে পড়বেন। নিঃশ্বাস বন্ধ করে প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করবেন – ঘন সবুজ গাছে ঢাকা পাহাড়, দুদ্দাড় বেগে নেমে আসা জলপ্রপাত, প্রায় যানশূন্য সড়ক, বেশির ভাগ সময়ে মেঘলা আকাশ – যেন এক অন্য জগৎ।

বিশ্বের সব চেয়ে বৃষ্টিপাতের জায়গায় আপনি যাচ্ছেন – রেনকোট বা বৃষ্টি সামলানোর অন্যান্য সরঞ্জাম নিতে ভুলবেন না। পথ খুবই সামান্য ১৪৭ কিমি। মন চাইলে দু’-একটা দিন শিলঙে কাটিয়ে যান।

দেহরাদুন থেকে বদরীনাথ হয়ে মানা

আর একটা স্মরণীয় পথ – উত্তর ভারতে। দেহরাদুন থেকে মানা – ভারত-চিন সীমান্তের শেষ গ্রাম। দূরত্ব ৩৪৪ কিমি। হিমালয়ের কোলে চড়াই-উতরাই ভেঙে উঠে যাবেন ১৪৬৬ ফুট থেকে একেবারে সাড়ে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায়। পথে সঙ্গী হবে প্রথমে ভাগীরথী, পরে অলকানন্দা। পথে পড়বে পাঁচটি প্রয়াগ – দেবপ্রয়াগ-রুদ্রপ্রয়াগ-কর্ণপ্রয়াগ-নন্দপ্রয়াগ-বিষ্ণুপ্রয়াগ, প্রয়াগ অর্থে দু’টি নদীর সঙ্গম। পথে পড়বে শংকরাচার্যের স্মৃতিধন্য জোশীমঠ, আর নারায়ণের আবাসভূমি বদরীনাথ তো আছেই। এক মন ভালো করা যাত্রাপথ। এ তো প্রকৃত অর্থেই তীর্থযাত্রা।          

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *