পুজোয় চলুন / ভ্রমণ অনলাইনের বাছাই : গাড়োয়াল

harsil

পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনে আসন সংরক্ষণ চলছে। পুজোর ছুটি মানে তো আর পুজোর পাঁচ দিন নয়, পুজোর ছুটি মানে একেবারে সেই দেওয়ালি ছাড়িয়ে। সুতরাং এখনও সময় আছে, বেড়ানোর প্ল্যান করে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলার। আর যদি বিমানে যেতে চান, যত আগে টিকিট কাটবেন, ততই ভাড়া কম হবে। যাই হোক, এখনও যদি পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান না করে উঠতে পারেন তা হলে খবর অনলাইন রয়েছে, আপনাদের জন্য সাজিয়ে দিচ্ছে ভ্রমণ-ছক। শুরু হয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে। তার পর সিকিম। এর পর সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্র-গোয়া, উত্তরপ্রদেশ, কুমায়ুন। এই পর্বে গাড়োয়াল।

sahastradhara
সহস্রধারা।

ভ্রমণ-ছক ১: দেহরাদুন-ডাকপাথার-চক্রাতা-বারকোট-উত্তরকাশী-হরসিল-গঙ্গোত্রী

প্রথম দিন – দেহরাদুন থেকে চলুন ডাকপাথার, দূরত্ব ৪০ কিমি। তার আগে দেহরাদুন দেখে নিন টনস্‌ নদীর তীরে তপকেশ্বর মহাদেব (স্টেশন থেকে সাড়ে ৫ কিমি), সহস্রধারা (১৩ কিমি) ও টনস্‌ নদীর কাছে রবার্স কেভ (৮ কিমি)। রাত্রিবাস যমুনার ধারে ডাকপাথারে।

দ্বিতীয় দিন – ডাকপাথার থেকে প্রথমে চলুন হিমাচলের পাওনটা সাহেব — গুরু গোবিন্দ সিং-এর স্মৃতিবিজড়িত, ২৫ কিমি। এর পর আরও ৬ কিমি গিয়ে নাহান – শিবালিকের কোলে সুন্দর পাহাড়ি শহর। সব শেষে আরও ৪৫ কিমি গিয়ে রেণুকাজি, হিমাচলের বৃহত্তম লেক, পাহাড়ে ঘেরা। পরশুরামের মায়ের নামে লেক, রয়েছে পরশুরাম লেকও। তার পাড়ে পরশুরাম মন্দির। আরও নানা মন্দির। ফিরুন গিরি নদীর পাড় ধরে পাওনটা হয়ে ডাকপাথারে, ৭২ কিমি। পথে পড়বে যমুনার ওপর আসান ব্যারেজ, ডাকপাথারের ১১ কিমি আগে। রাত্রিবাস ডাকপাথার।

তৃতীয় দিন – ভোরেই চলুন শৈলশহর চক্রাতা (২১৫৩ মিটার), দূরত্ব ৫১ কিমি। ডাকপাথার থেকে ৭ কিমি গেলেই পড়বে কালসি। এখানে দেখে নিন ১৮৬০ সালে আবিষ্কৃত সম্রাট অশোকের শিলালিপি। এখান থেকেই গাড়ি উঠতে শুরু করে পাহাড়ে, পৌঁছে যায় সেনাশহর চক্রাতায়। তুষারাবৃত বন্দরপুঞ্ছ শৃঙ্গ দৃশ্যমান। রাত্রিবাস চক্রাতা।

a view from chakrata
চক্রাতা থেকে।

চতুর্থ দিন – আজও থাকুন চক্রাতায়।

চক্রাতায় দ্রষ্টব্য – চিন্তাহরণ মহাদেব (চক্রাতা বাজার থেকে কিছুটা নেমে), খারাম্বা চুড়ো (৩০৮৪ মি, ৩ কিমি), চিলমিরি সানসেট পয়েন্ট (৫ কিমি), থানাডাণ্ডা (চিরিমিরি থেকে ১ কিমি চড়াই উঠে), রামতাল গার্ডেন (৮ কিমি), চানি চুরানি (১৮ কিমি, সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য), কানাসার (বিশাল বিশাল কাণ্ডওয়ালা বহু প্রাচীন দেবদারুর জঙ্গল ও কানাসার দেবতার মন্দির, ২৬ কিমি), দেওবন  (তুষারমৌলী হিমালয়ের দৃশ্য, ১০ কিমি, শেষ ২ কিমি হাঁটা)।

(চক্রাতায় পৌঁছে প্রথম দিন স্থানীয় দ্রষ্টব্য দেখে নিন। পরের দিন সকালে ঘুরে আসুন কানাসার ও দেওবন। চক্রাতা ফিরে দুপুরে খেয়ে চলুন রামতাল গার্ডেন ও চানি চুরানি।)

পঞ্চম দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন বারকোট, ৮৫ কিলোমিটার। পথে দেখে নিন টাইগার ফলস্‌ (চক্রাতা থেকে ১৯ কিমি), লাখামণ্ডল (চক্রাতা থেকে ৬৬ কিমি, নানা দেবতার মন্দিররাজি। পাহাড়ের গায়ে বিশাল কিছু গহ্বর। জনশ্রুতি, পঞ্চপাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারার জন্য এখানেই তৈরি হয়েছিল লাক্ষার জতুগৃহ। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে বার্নি নদী)। যমুনার ধারে বারকোটে এ দিনটা বিশ্রাম করুন। দেখুন তুষারাবৃত বন্দরপুঞ্ছ শৃঙ্গ।

ষষ্ঠ দিন – সকালেই চলুন উত্তরকাশী ১১৮০ মিটার, ৮০ কিমি। এখানে দেখে নিন বিশ্বনাথ ও অন্যান্য মন্দির এবং ভাগীরথীর ধারে কেদারঘাট। রাত্রিবাস উত্তরকাশী।

nachiketa tal
নচিকেতা তাল।

সপ্তম দিন – আজ চলুন নচিকেতা তাল (২৪৫৩ মিটার, ৩২ কিমি)। চৌরঙ্গি খাল পর্যন্ত গাড়িতে গিয়ে ৩ কিমি ট্রেক জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। উদ্দালক মুনির ছেলে নচিকেতার নামে এই লেক। কাছেই নাগ দেবতা মন্দির। রাত্রিবাস উত্তরকাশী।

অষ্টম দিন – ভোরেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন হরসিল (২৬২০ মিটার, ৭৫ কিমি)। পথে দেখে নিন গাংনানির উষ্ণ প্রস্রবণ। রাত্রিবাস হরসিল।

নবম দিন – ভাগীরথী উপত্যকায় পাইন ও দেওদারে ছাওয়া অনুপম সৌন্দর্যের পাহাড়ি জনপদ হরসিল। চলুন ৩ কিমি দূরে ধারালি। ভাগীরথী পেরিয়ে ১ কিমি চড়াই ভেঙে মুখবা গ্রাম, গঙ্গোত্রী মন্দিরের বিগ্রহ মা গঙ্গার শীতকালীন আবাস। মুখবা গ্রাম থেকে দেখুন সুদর্শন, শিবলিঙ্গ, ভাগীরথী-সহ হিমালয়ের বিভিন্ন তুষারশৃঙ্গ। ধারালি থেকে ৩ কিমি চড়াই ভেঙে উঠতে পারেন সাততাল (কুমায়ুনের সাততালের সঙ্গে গোলাবেন না), বিভিন্ন উচ্চতায় সাতটি লেক, যার অনেকগুলিই আজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে যা আছে, সেটাই উপভোগ করার মতো।

দশম দিন – আজও থাকুন হরসিলে। সকালেই চলুন গঙ্গোত্রী (৩০৪২ মি), ২৫ কিমি। উপভোগ করুন গঙ্গোত্রীর নিসর্গ। মন্দির বন্ধ হলে ফিরে আসুন হরসিলে।

একাদশ দিন – হরসিল থেকে ভোর বেলায় রওনা হয়ে ফিরে আসুন হরিদ্বার। রাত্রিবাস হরিদ্বার।

দ্বাদশ দিন – বাড়ির পথে।

Dakpathar
ডাকপাথার।

ভ্রমণ-ছক ২: দেহরাদুন-ডাকপাথার-চক্রাতা-মুসোরি-ধনোলটি

প্রথম দিন থেকে চতুর্থ দিনভ্রমণ-ছক ১-এর মতো।

পঞ্চম দিন – আজও থাকুন চক্রাতায়। ঘুরে আসুন টাইগার ফলস্‌ (চক্রাতা থেকে ১৯ কিমি), লাখামণ্ডল (চক্রাতা থেকে ৬৬ কিমি, নানা দেবতার মন্দিররাজি। পাহাড়ের গায়ে বিশাল কিছু গহ্বর। জনশ্রুতি, পঞ্চপাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারার জন্য এখানেই তৈরি হয়েছিল লাক্ষার জতুগৃহ। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে বার্নি নদী)।

ষষ্ঠ দিন – চলুন মুসোরি, ৮০ কিমি। পথে দেখে নিন কেম্পটি ফলস। রাত্রিবাস মুসোরি।

mall road, mussorie
মল রোড, মুসোরি।

সপ্তম দিন – আজও থাকুন মুসোরিতে। হাঁটাহাঁটি করুন ম্যালে। দেখে নিন ক্যামেলস ব্যাক রোডে দুর্গা মন্দির, ভাট্টা ফলস, নাগ দেবতা মন্দির, গান হিল পয়েন্ট, মোসি ফলস, ফ্লাগ হিল, লাল টিব্বা (২৬১০ মি), মালসি ডিয়ার পার্ক। গান হিল বেড়িয়ে নিন রোপওয়ে চেপে। রাত্রিবাস মুসৌরি।

অষ্টম দিন – মুসোরি থেকে ধনোলটি (২২৮৬ মি)। দূরত্ব ৩২ কিমি। মুসোরি থেকে এলে ধনোলটিতে রাস্তার বাঁ দিক বরাবর গাড়োয়াল হিমালয়ের বিশাল রেঞ্জ চোখে পড়ে। সকাল সকাল চলে আসুন, যাতে সারা দিন ধরে ধনোলটির সৌন্দর্য উপভোগ করুন। বিকেল হওয়ার আগে চলুন ধনোলটি ভিউ পয়েন্ট। দেড় কিমি ট্রেক। উপরে উঠে বিস্তীর্ণ বুগিয়াল। নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত। রাত্রিবাস ধনোলটি।

নবম দিন – ভোরেই চলুন ৩০৪৯ মিটার উচ্চতায় সুরখণ্ডাদেবীর (দুর্গা) মন্দির। চাম্বার পথে ৫ কিমি গিয়ে ২ কিমি চড়াই ভাঙা। হিমালয়ের দৃশ্য ভোলার নয়। দুপুরের আগে ধনোলটি ফিরে চলুন হরিদ্বার, ১১২ কিমি। রাত্রিবাস ধনোলটি।

দশম দিন – বাড়ির পথে।

ভ্রমণ-ছক ৩: দেহরাদুন-মুসোরি-ধনোলটি-শ্রীনগর-খিরসু-পৌড়ী-ল্যান্সডাউন

প্রথম দিন– দেহরাদুন থেকে চলুন মুসোরি (২০০৬ মিটার), দূরত্ব ৪০ কিমি। তার আগে দেহরাদুন দেখে নিন টনস্‌ নদীর তীরে তপকেশ্বর মহাদেব (স্টেশন থেকে সাড়ে ৫ কিমি), সহস্রধারা (১৩ কিমি) ও টনস্‌ নদীর কাছে রবার্স কেভ (৮ কিমি)। পথে দেখে নিন মালসি ডিয়ার পার্ক। রাত্রিবাস মুসোরি।

দ্বিতীয় দিন – আজও থাকুন মুসোরিতে। হাঁটাহাঁটি করুন ম্যালে। দেখে নিন ক্যামেলস ব্যাক রোডে দুর্গা মন্দির, ভাট্টা ফলস, নাগ দেবতা মন্দির, গান হিল পয়েন্ট, মোসি ফলস, ফ্লাগ হিল, লাল টিব্বা (২৬১০ মি)। গান হিল বেড়িয়ে নিন রোপওয়ে চেপে। ঘুরে আসুন কেম্পটি ফলস্‌ (১৫ কিমি)।

a view from dhanaulti
ধনোলটি থেকে।

তৃতীয় ও চতুর্থ দিন – এই দু’ দিন থাকুন ধনোলটিতে। দেখুন ভ্রমণ ছক ২-এর অষ্টম ও নবম দিন

পঞ্চম দিন – চলুন অলকানন্দা তীরে শ্রীনগর (৫৬০ মি, কাশ্মীরের নয়), ১২৪ কিমি। এখানে দেখে নিন কমলেশ্বর মহাদেব মন্দির (জনশ্রুতি, এই মন্দিরেই রাম হাজার পদ্মের অর্ঘ্য দেন দেবতা শিবকে। এখানেই নাকি একটা চোখ কম পড়াতে রাম নিজের চোখ উৎসর্গ করতে চান। সেই থেকে রামকে বলা হয় কমল নয়ন)), আদি শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত কিকিলেশ্বর মহাদেব মন্দির, কেশোরাই মঠ, ৩ কিমি দূরে বাবা গোরখনাথ গুহার উলটো দিকে শংকর মঠ, ১৭ কিমি দূরে পৌড়ী-গাড়োয়াল রাজ্যের রাজধানী দেবলগড় (এখানে গাড়োয়ালি স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গৌরী দেবী মন্দির, মা রাজেশ্বরী মন্দির ইত্যাদি।

ষষ্ঠ দিন – শ্রীনগর থেকে চলুন খিরসু, ৩৫ কিমি। হিমালয়ের দিগন্তবিস্তৃত শিখররাজির (তিনশোরও বেশি) জন্য খ্যাতি খিরসুর (১৭০০ মি)। রাত্রিবাস খিরসু।

সপ্তম দিন – খিরসু থেকে চলুন পৌড়ী (১৯ কিমি, ১৮১৪ মি)। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে ত্রিশূল, হাতি পর্বত, নীলকণ্ঠ, কেদারনাথ, চৌখাম্বা, ভৃগুপন্থ, গঙ্গোত্রী গ্রুপ, বন্দরপুঞ্ছ ছাড়াও তুষারে মোড়া হিমালয়ের শিখররাজির শোভা দেখুন। দেখুন বাসস্ট্যান্ডে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, ২ কিমি দূরে ঘন জঙ্গলে কান্ডোলিয়া শিবমন্দির, ৩ কিমি পাহাড় চড়ে ৮ শতকের কঙ্কালেশ্বর শিব মন্দির। রাত্রিবাস পৌড়ী।

lansdowne
ল্যান্সডাউন।

অষ্টম দিন – চলুন ল্যান্সডাউন (১৭১৬ মি), ৮৬ কিমি। রাত্রিবাস ল্যান্সডাউন।

নবম দিন – আজও থাকুন ল্যান্সডাউনে। টিপ-এন-টপ পয়েন্ট থেকে দেখুন অসংখ্য গিরিশিরা। রমণীয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। আরও দেখুন দরওয়ান সিং মিউজিয়াম, ভুল্লা তাল, সেন্ট মেরি চার্চ, সেন্ট জন চার্চ, কালেশ্বর শিব মন্দির, শাকম্ভরী মন্দির, সেনাবাহিনীর দুর্গা মন্দির, ভীম পকোড়া, হাওয়া ঘর ইত্যাদি।

দশম দিন – ল্যান্সডাউন থেকে নাজিবাবাদ (৬৩ কিমি) বা হরিদ্বার (১০৬ কিমি) এসে সেখান থেকে ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন। পথে সম্ভব হলে দেখে নিন কোটদ্বার থেকে ১৪ কিমি দূরে কণ্বাশ্রম, শকুন্তলার বড়ো হওয়ার জায়গা কণ্ব মুনির আশ্রম।

ভ্রমণ-ছক ৪:  গঙ্গোত্রী-বদরীনাথ

প্রথম দিন – হরিদ্বার থেকে চলুন উত্তরকাশী। দূরত্ব ১৮৫ কিমি। রাত্রিবাস উত্তরকাশী (১১৫৮ মি)।

দ্বিতীয় দিন – সকালে উত্তরকাশীর বিশ্বনাথ ও অন্যান্য মন্দির দেখে এবং ভাগীরথীর ধারে কেদারঘাট ঘুরে চলুন ভাগীরথী উপত্যকায় পাইন ও দেওদারে ছাওয়া অনুপম সৌন্দর্যের পাহাড়ি জনপদ হরসিল (২৬২০ মি), দূরত্ব ৭৫ কিমি। পথে দেখে নিন গাংনানির উষ্ণপ্রস্রবণ। রাত্রিবাস হরসিল।

gangotri
গঙ্গোত্রী।

তৃতীয় দিন – ঘুরে আসুন গঙ্গোত্রী (৩০৪২ মি), ২৫ কিমি। উপভোগ করুন গঙ্গোত্রীর নিসর্গ। মন্দির বন্ধ হলে ফিরে আসুন হরসিলে। রাত্রিবাস হরসিল।

চতুর্থ দিন – হরসিল থেকে চলুন অলকানন্দা তীরে শ্রীনগর (৫৭৯ মি), ২২১ কিমি। রাত্রিবাস শ্রীনগর।

পঞ্চম দিন – শ্রীনগর থেকে চলুন জোশীমঠ (১৮৭৫ মি), ১২৩ কিমি। দেখে নিন বাসস্ট্যান্ডের ১ কিমি নীচে নৃসিংহ মন্দির, বাসস্ট্যান্ডের উপরে শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত জ্যোতির্মঠ। রাত্রিবাস জোশীমঠ।

ষষ্ঠ দিন – ভোরেই চলুন বদরীনাথ (৩১৫৫ মি), দূরত্ব ৪৬ কিমি। পথে পড়বে বিষ্ণুপ্রয়াগ, অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার সঙ্গম। শ্বেতশুভ্র নীলকণ্ঠ (৬৫৯৬ মি) মুকুট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বদরীনাথের শিরে। রাত্রিবাস বদরীনাথ।

badrinath
বদরীনাথ।

বদরীনাথে দেখে নিন- 

নীলকণ্ঠে সূর্যোদয়, দোকানপাটের মধ্যে দিয়ে নেমে ঝোলাপুলে অলকানন্দা পেরিয়ে বদরীনাথের মন্দির, সন্ধ্যায় দেখুন আরতি, চলুন মানা গ্রাম (তিব্বতের পথে শেষ বসতি, ৩ কিমি)। দেখে নিন ব্যাস গুহা, অলকানন্দা ও সরস্বতীর সঙ্গম কেশবপ্রয়াগ, সরস্বতীর ওপরে পাথরের ভীম পুল (এখান থেকে ৫ কিমি হেঁটে বসুধারা ফলস্‌, ১২২ মিটার উঁচু), চরণপাদুকা (জিএমভিএন ট্যুরিস্ট লজ থেকে ৩ কিমি হাঁটা, খুব চড়াই নয়। জনশ্রুতি, পাথরে বিষ্ণুর পায়ের চিহ্ন)।

সপ্তম দিন – বদরীনাথ থেকে আউলি (২৫১৯ মি), দূরত্ব ৫৬ কিমি। পুরোটা গাড়িতে যেতে পারেন, আবার জোশীমঠ থেকে কেবল কারেও ঘুরে আসতে পারেন। আউলিতে দেখুন দিগন্তবিস্তৃত হিমালয়ের শৃঙ্গরাজিশৃঙ্গরাজির মাথায় সূর্যাস্ত অতুলনীয়।

(কেবল কারেই চলুন। প্রথমে চলুন ১০ নম্বর টাওয়ার স্টেশনে, কেবল কার এতটাই আসে। এখানে নেমে গড়সন বুগিয়াল দেখে ফেরার পথে ৮ নম্বর টাওয়ার স্টেশনে নেমে সেখান থেকে চেয়ার কারে আউলি চলে আসুন। জোশীমঠে কেবল কার স্টেশনে টিকিট কাটার সময় আপনার প্ল্যান জানিয়ে দিলে সেইমতো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। টিকিটে যাতায়াতের ভাড়া ধরা। ফেরার দিন জানিয়ে দেবেন। সঙ্গে গাড়ি থাকলে জোশীমঠে এক দিন রেখে দেবেন।)

on chair car, auli
চেয়ার কারে আউলি।

অষ্টম দিন – আজও থাকুন আউলিতে, উপভোগ করুন এর সৌন্দর্য, বিশ্রাম নিন।

নবম দিন – আউলি থেকে চলুন রুদ্রপ্রয়াগ (৬১০মি), অলকানন্দা-মন্দাকিনী সঙ্গম, ১২৪ কিমি। পথে দেখুন নন্দপ্রয়াগ (অলকানন্দা ও নন্দাকিনীর সঙ্গম) এবং কর্ণপ্রয়াগ (অলকানন্দা ও পিন্ডারগঙ্গার সঙ্গম)। বিকেলে ঘুরে নিন সঙ্গমের কাছে রুদ্রনাথ শিবমন্দির, জগদম্বা মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির। রাত্রিবাস রুদ্রপ্রয়াগ।

দশম দিন– রুদ্রপ্রয়াগ থেকে হরিদ্বার, ১৬৪ কিমি। পথে দেখে নিন দেবপ্রয়াগ, অলকানন্দা ও ভাগীরথীর সঙ্গম। এখানেই অলকানন্দার যাত্রা শেষ। গঙ্গার পথ চলা শুরু। রাত্রিবাস হরিদ্বার।

একাদশ দিন – আজও থাকুন হরিদ্বারে। হরিদ্বারে দেখে নিন গঙ্গারতি, মনসা পাহাড়, চণ্ডী পাহাড়, কনখল ইত্যাদি। মনসা পাহাড়, চণ্ডী পাহাড় যাওয়ার জন্য রোপওয়ে-ও আছে।

দ্বাদশ দিন – বাড়ির পথে।

yamunotri
যমুনোত্রী।

ভ্রমণ-ছক ৫: প্রথাগত চারধাম যাত্রা

প্রথম দিন – হরিদ্বার থেকে জানকীচটি, ২২১ কিমি। রাত্রিবাস জানকীচটি।

দ্বিতীয় দিন – যমুনোত্রী (৩২৯১ মি) ঘুরে আসা। যাতায়াতে ১০ কিমি মতো হাঁটা। রাত্রিবাস জানকীচটি।

তৃতীয় দিন – সক্কালে যাত্রা করুন গঙ্গোত্রীর উদ্দেশে, ২২০ কিমি। রাত্রিবাস গঙ্গোত্রী

চতুর্থ দিন – আজও থাকুন গঙ্গোত্রীতে (৩০৪২ মি)। উপভোগ করুন ভাগীরথী ও কেদারগঙ্গার সঙ্গমে গঙ্গোত্রীর সৌন্দর্য।

পঞ্চম দিন – গঙ্গোত্রী থেকে উত্তরকাশী, ৯৫ কিমি। ঘোরাঘুরি। রাত্রিবাস উত্তরকাশী। (দেখুন ভ্রমণ-ছক ১, ষষ্ঠ দিন)

ষষ্ঠ দিন – চলুন গুপ্তকাশী, ১৯৪ কিমি। দেখে নিন বাসপথের কিছুটা উপরে কেদারের মন্দিরের আদলে তৈরি শিবমন্দির। রাত্রিবাস গুপ্তকাশী।

সপ্তম দিন – ভোরে বেরিয়ে গুপ্তকাশী থেকে শোনপ্রয়াগ (৩০ কিমি) পৌঁছে হাঁটা শুরু। ১০ কিমি হেঁটে রাত্রিবাস ভীমবলী (৮৭৩০ ফুট)। অথবা আরও ৬ কিমি এগিয়ে লিনচোলিতেও (১০৩৩০ ফুট) থাকতে পারেন।

kedarnath
কেদারনাথ।

অষ্টম দিন – ভীমবলী হলে ১০ কিমি হেঁটে অথবা লিনচোলি হলে ৪ কিমি হেঁটে কেদারনাথ (১১৭৫৫ ফুট)। রাত্রিবাস কেদারনাথ।

নবম দিন – কেদার থেকে হেঁটে শোনপ্রয়াগ আসুন (২০ কিমি), চলুন উখিমঠ (১৩১১ মি), ৪৪ কিমি। মন্দির দর্শন। রাত্রিবাস উখিমঠ।

দশম দিন – উখিমঠ থেকে চলুন জোশীমঠ, ১২৯ কিমি। রাত্রিবাস জোশীমঠ। (দেখুন ভ্রমণ-ছক ৪, পঞ্চম দিন)।

একাদশ দিন – চলুন বদরীনাথ। (দেখুন ভ্রমণ-ছক ৪, ষষ্ঠ দিন)।

দ্বাদশ দিন – বদরীনাথ থেকে পৌঁছে যান হরিদ্বার, ৩১৬ কিমি। রাত্রিবাস হরিদ্বার।

ত্রয়োদশ দিন – ঘরের পানে।

কী ভাবে যাবেন ও ফিরবেন

হাওড়া থেকে দেহরাদুন যাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো ট্রেন উপাসনা এক্সপ্রেস। প্রতি মঙ্গল এবং শুক্রবার দুপুর ১টায় হাওড়া ছেড়ে দেহরাদুন পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধ্যা ৬.১০-এ। রয়েছে দুন এক্সপ্রেস, প্রতিদিন রাত ৮.২৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে দেহরাদুন পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৭.৩৫-এ।

দিল্লি থেকে দেহরাদুন আসার ট্রেন আছে পাঁচটা। এ ছাড়াও দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গেই ট্রেন যোগাযোগ আছে দেহরাদুনের। ট্রেনের অভাবে দিল্লি হয়ে দেহরাদুন আসাই ভালো।

বিমানেও দিল্লি এসে দেহরাদুন আসতে পারেন বিমানে। ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে। সড়ক পথে দিল্লি থেকে দেহরাদুন ২৫১ কিমি।

haridwar
হরিদ্বার।

হাওড়া থেকে হরিদ্বার যাওয়ার জন্য রয়েছে উপাসনা এক্সপ্রেস। প্রতি মঙ্গল এবং শুক্রবার দুপুর একটায় ছেড়ে হরিদ্বার পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৩:৫০-এ। রয়েছে কুম্ভ এক্সপ্রেস, মঙ্গল এবং শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে পাঁচ দিন দুপুর একটায় হাওড়া থেকে ছেড়ে হরিদ্বার পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৪:৪০। রয়েছে দুন এক্সপ্রেসও। হাওড়া থেকে রাত ৮.২৫-এ ছেড়ে হরিদ্বার তৃতীয় দিন ভোর পৌনে ৫টায়।

দিল্লি হয়েও আসতে পারেন। হাওড়া থেকে রাজধানী বা দুরন্ত ধরে বা শিয়ালদহ থেকে রাজধানী বা দুরন্ত ধরে দ্বিতীয় দিন দিল্লি আসুন। দিল্লি থেকে হরিদ্বার ১৮০ কিমি। গাড়িতে আসতে পারেন, মুহুর্মুহু বাসও পাবেন।)

নাজিবাবাদ থেকে হাওড়া ফেরার জন্য রয়েছে দুন এক্সপ্রেস। রাত ১১:৪৫-এ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৬:৫৫-এ। রয়েছে অমৃতসর-হাওড়া মেল, রোজ রাত ২.৪৯-এ, হাওড়া পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৭.২০-তে। রয়েছে অকাল তখৎ এক্সপ্রেস। প্রতি মঙ্গল এবং শুক্রবার দুপুর ১:০৭-এ ছেড়ে কলকাতা স্টেশন পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৩:১৫-এ। এ ছাড়া আছে ডাউন জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। প্রতিদিন সকাল ৮.০৩-এ ছেড়ে কলকাতা স্টেশন পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৩:৫৫-এ। অমৃতসর-হাওড়া এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ২.৩৩-এ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় তৃতীয় দিন বিকেল পৌনে ৪টেয়।

হরিদ্বার থেকে ফেরার ট্রেন। উপাসনা এক্সপ্রেস প্রতি বুধ এবং শনিবার রাত ১১:৫০-এ ছেড়ে, হাওড়া পৌঁছোয় তৃতীয় দিন ভোর ৩:১৫-এ। বাকি পাঁচদিন একই সময় রয়েছে কুম্ভ এক্সপ্রেস। দুন এক্সপ্রেস রোজ রাত্রি ১০.১০-এ ছেড়ে তৃতীয় দিন সকাল ৬.৫৫-য় হাওড়া। এ ছাড়াও দিল্লি হয়ে ফিরতে পারেন।

সারা দিনে হরিদ্বার থেকে দিল্লি আসার অনেক ট্রেন আছে। ট্রেনের মান অনুযায়ী সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে বারো ঘণ্টা। দেশের অন্য শহরের সঙ্গে হরিদ্বারের ট্রেন যোগাযোগ থাকলেও তা খুব সীমিত। তাই সে ক্ষেত্রে দিল্লি হয়ে যাতায়াত করাই ভালো।

ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in

tiger fall, chakrata
টাইগার ফল, চক্রাতা।
কী ভাবে ঘুরবেন

সব জায়গায় বাস পরিষেবা পাবেন। কিন্তু পাহাড়ি জায়গা, বাসের সংখ্যা কম। তার ওপর স্থানীয় মানুষের ভরসা বাসই। তাই মালপত্র নিয়ে বাসে যাওয়া কষ্টকর। শেয়ার গাড়িও মেলে কোনো কোনো জায়গায়, তবে সব জায়গায় নয়। তবে ভ্রমণের সময়সূচি অক্ষুণ্ণ রাখতে, একটু আরামে ঘুরতে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। সে ক্ষেত্রে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে সেখানে পৌঁছে স্থানীয় যান বা হেঁটে ঘোরা যেতে পারে। ভ্রমণ-ছক ২ ও ৩-এর ক্ষেত্রে এটা করা যেতেই পারে। আর বাকি তিনটি ছকের ক্ষেত্রে দেহরাদুন বা হরিদ্বার থেকে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া ভালো। হরিদ্বারে স্টেশনের কাছেই ট্যাক্সি ইউনিয়নের স্ট্যান্ড।

কোথায় থাকবেন

চক্রাতা ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের (জিএমভিএন) বিশ্রামাবাস। অনলাইন বুকিং gmvnl.in । তবে অনলাইনে বুক করার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন পর্যটকরা। সে ক্ষেত্রে জিএমভিএনের বিভিন্ন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জিএমভিএনের কলকাতা অফিসের ঠিকানা- রুম নং- ২২৪, মার্শাল হাউস, ৩৩/১ এসএফ, নেতাজি সুভাষ রোড। ফোন- ২২৬১০৫৫৪।

চক্রাতায় থাকার জন্য অনেক বেসরকারি হোটেল রয়েছে, কিন্তু সব থেকে ভালো জায়গা হোটেল স্নো-ভিউ। যোগাযোগ- ৯৪১১৩৬৩২৩১, ৯৪১০৮২৩২০৭ । ওয়েবসাইট www.chakratasnowview.co  ইমেল- chakratasnowview@gmail.com

gmvn trh, khirsu
জিএমভিএন টুরিস্ট রেস্ট হাউস, খিরসু।

এ ছাড়া প্রায় সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল রয়েছে। এদের সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq  ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

মনে রাখবেন

(১) চক্রাতায় অনেক জায়গা আছে, যেখানে জিপই ভরসা।

(২) কেদারযাত্রীদের শোনপ্রয়াগ থেকে কেদার যাত্রার ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

(৩) ভীম পুল থেকে যদি বসুধারা ফলস্‌ যেতে চান, তা হলে একটা দিন বেশি থাকতে হবে বদরীনাথে। এমনিতেই হাতে সময় থাকলে বদরীনাথে থাকাটা দু’ দিন করলে ভালো।

(৪) ইচ্ছা করলে হরিদ্বারে একাধিক দিন থাকতে পারেন। গঙ্গার ধারে যদি থাকার জায়গা পান, তা হলে তার চেয়ে মনোরম আর কিছু হয় না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *