পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের ভ্রমণ-ছক : উত্তর-পূর্ব / ২

northest2

১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী, দুর্গাপুজো শুরু। হাতে আর দু’ সপ্তাহও নেই, শুরু হয়ে যাবে পুজোর ছুটিতে ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলতে হবে পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের দেশ। ঘোরার জন্য রয়েছে নামী-অনামী বহু জায়গা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খবর অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে। এই পর্বে আরও উত্তর-পূর্ব।

ভ্রমণ- ছক ১ : অসম-মেঘালয়-অরুণাচল

প্রথম দিন – হাওড়া থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেস বা শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে রওনা হন গুয়াহাটির পথে। সরাইঘাট ছাড়ে বিকেল ৩.৫০-এ, কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়ে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে।

দ্বিতীয় দিন – কাঞ্চনজঙ্ঘা গুয়াহাটি পৌঁছোয় ভোর ৪টেয়, সরাইঘাট পৌঁছোয় সকাল ৯.৫০-এ। স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে রওনা হয়ে যান শিলং, দূরত্ব ৯৯ কিমি।  পথে দেখে নিন উমিয়াম লেক তথা বড়াপানি। গুয়াহাটি থেকে নিয়মিত বাসও আছে। রাত্রিবাস শিলং।

তৃতীয় দিন — আজও থাকুন শিলং-এ। দেখে নিন —

(১) ওয়ার্ডস লেক ও বোটানিল্যাল গার্ডেন। (২) ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল। (৩) ১০ কিমি দূরে শিলং পিক (৬৪৪৫ ফুট)। (৪) শিলং পিক যাওয়ার পথেই এলিফ্যান্ট ফলস্‌। (৫) শিলং গলফ্‌ কোর্স। (৬) ৫ কিমি দূরে বিশপ ও বিডন ফলস। (৭) রিবং-এ রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি-বিজড়িত ‘মালঞ্চ’ বাড়ি। (৮) ওয়াংখার বাটারফ্লাই মিউজিয়াম ইত্যাদি।

shillong city from shillong peak
শিলং পিক থেকে শিলং শহর।

চতুর্থ দিন – খাসি পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে শিলং থেকে চলুন চেরাপুঞ্জি। দূরত্ব ৫৪ কিমি। চেরাপুঞ্জিতে দেখুন রামকৃষ্ণ মিশন (চেরাপুঞ্জির একটু আগে), নোহকালিকাই ফলস্‌, ইকো পার্ক, সেভেন সিস্টার ফলস্‌, খাংখারাং পার্ক, নংগিথিয়াং ফলস্‌, মওসমাই কেভ, ধাপে ধাপে তিন ধাপে নামা কেইনরাম ফলস্‌ (সেলার পথে ১০ কিমি, মেঘালয়ের সর্বোচ্চ) এবং ডবল ডেকার রুট ব্রিজ। রাত্রিবাস চেরাপুঞ্জি।

পঞ্চম দিন – চলুন মওলিননং। এশিয়ার সব থেকে পরিচ্ছন্ন গ্রাম। চেরাপুঞ্জি থেকে দূরত্ব ৮০ কিমি। গ্রামের মাঝে সুন্দর চার্চ, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে থাইলাং নদী। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ থাইলাং-এর ওপর লিভিং রুট ব্রিজ। আরও দু’টি দ্রষ্টব্য ব্যালান্সিং রক এবং স্কাই ভিউ পয়েন্ট। মওলিননং ঘুরে চলুন বাংলাদেশ সীমান্তে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য ডাওকি। দুরত্ব ৩০ কিমি। ফিরে আসুন শিলং। রাত্রিবাস শিলং।

ষষ্ঠ দিন – বাসেই ফিরে আসুন গুয়াহাটি। রাত্রিবাস গুয়াহাটি।

সপ্তম দিন – আজও রাত্রিবাস গুয়াহাটি।

kamakhya temple
লামাখ্যা মন্দির।

গুয়াহাটিতে দেখে নিন –

কামাখ্যা মন্দির (নীলাচল পাহাড়ে), ভুবনেশ্বরী মন্দির (কামাখ্যাদেবীকে পুজো দিয়ে চলুন নীলাচল পাহাড়ের মাথায়, ভুবনেশ্বরী মন্দির চত্বর থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য ভোলার নয়), নবগ্রহ মন্দির (শহরের প্রাণকেন্দ্রে, নবগ্রহ পাহাড়ের শিরে, পাহাড়ের উপর থেকে গুয়াহাটি শহর ও ব্রহ্মপুত্রের অসাধারণ ভিউ), উমানন্দ মন্দির (ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে পিকক আইল্যান্ডে, কাছারি ঘাট বা ফ্যান্সিবাজার ফেরি ঘাট থেকে ফেরি), বশিষ্ঠ আশ্রম (পাহাড় থেকে নেমে আসা তিনটি ঝরনাধারায় সৃষ্টি হয়েছে বশিষ্ঠ গঙ্গা, কাছেই বশিষ্ঠ মন্দির, শিব মন্দির), বালাজি মন্দির (তিরুপতি মন্দিরের আদলে গড়া), চিড়িয়াখানা ও বটানিক্যাল গার্ডেন।

অষ্টম দিন – চলুন জিয়া ভরলি নদীর তীরে ভালুকপং, দূরত্ব ২৪০ কিমি। দেখুন ৭ কিমি দূরে টিপিতে অর্কিড আর ক্যাকটাসের অর্কেডারিয়াম। দেখে নিতে পারেন জিয়া ভরলি নদীর তীরে ভালুকপং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। রাত্রিবাস ভালুকপং।

sela pass
সেলা পাস।

নবম দিন – সকালেই বেড়িয়ে পড়ুন, গন্তব্য বমডিলা (২৫৩০ মিটার), দূরত্ব ৯৭ কিমি। দেখে নিন বমডিলা মন্যাস্টেরি, আপার গোম্পা, লোয়ার গোম্পা, বমডিলা ভিউ পয়েন্ট, আর আর হিল, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট সেন্টার, চিলিপাম মন্যাস্টেরি (বমডিলা আসার পথে দেখা নেওয়া যায়। টেঙ্গা মার্কেট থেকে ব্রিজ পেরিয়ে রূপা ভ্যালির পথে, বমডিলা থেকে ২৮ কিমি) ইত্যাদি। রাত্রিবাস বমডিলা।

দশম দিন – চলুন তাওয়াং (৩০৪৮ মিটার), দূরত্ব ১৭১ কিমি। পথে পড়বে ৪২১৫ মিটার উঁচু সেলা পাস। দেখে নিন সেলা লেক। তাওয়াং শহরে ঢোকার ১৭-১৮ কিমি আগে জসবন্ত গড়, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিক জসবন্ত সিং-এর স্মৃতিতে তৈরি স্মারক। রাত্রিবাস তাওয়াং।

একাদশ ও দ্বাদশ দিন – তাওয়াং-এ ঘোরাঘুরি ও রাত্রিবাস।

tawang monastry
তাওয়াং মন্যাস্ট্রি।
তাওয়াং-এ দেখে নিন –

(১) তাওয়াং মন্যাস্টেরি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম, লাসার পরেই।  রয়েছে মিউজয়াম, বুদ্ধের ২০ ফুট উঁচু মূর্তি ইত্যাদি। ওপর থেকে তাওয়াং শহরের অভূতপূর্ব দৃশ্য।

(২) তাওয়াং ওঅর মেমোরিয়াল – সিটি সেন্টার থেকে ১ কিমি, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতিতে তৈরি স্মারক স্তম্ভ।

(৩) নুরানাং ফলস্‌ – তাওয়াং থেকে ২৫ কিমি।

(৪) উরগেলিং গোম্পা – তাওয়াং শহরেই, ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থল।

(৫) পি টি সো লেক – শহর থেকে ২১ কিমি। হিমালয়ের তুষারাবৃত নানা শৃঙ্গ দৃশ্যমান।

madhuri lake
মাধুরী লেক।

(৬) মাধুরী লেক – শহর থেকে ৪০ কিমি, আরও এক নাম সাংতেসর লেক। মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ফিল্ম ‘কোয়লা’র শুটিং হওয়ার পর এই লেক মাধুরী লেক হিসাবে পরিচিত।

(৭) নাগুলা লেক – বুম লা-র পথে।

(৮) ভারত-চিন সীমান্তে বুম লা ও দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা

ত্রয়োদশ দিন – চলে আসুন দিরাং, দূরত্ব ১২৯ কিমি। দিরাং নদীর পাড়ে দিরাং শহর। দেখে নিন আপেল বাগিচা, কালচক্র গোম্পা, অর্কিড রিসার্চ সেন্টার, ইয়াক রিসার্চ সেন্টার, উষ্ণ জলের কুণ্ড (৫ কিমি দূরে), দিরাং জং ইত্যাদি। রাত্রিবাস দিরাং।

চতুর্দশ দিন – চলে আসুন তেজপুর, ১৯৬ কিমি। রাত্রিবাস।

পঞ্চদশ দিন – খুব ভোরে বেরিয়ে চলে আসুন গুয়াহাটি, ১৮৫ কিমি। ঘরে ফেরার ট্রেন ধরুন। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে পরের দিন ভোর ৫:১০-এ হাওড়া পৌঁছোয় সরাইঘাট এক্সপ্রেস। কামরূপ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৭.৪৫-এ গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৫:৪৫-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ১০:৫৫-এ গুয়াহাটি  থেকে ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধ্যা ৭:২৫-এ। দেশের অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার জন্যও ট্রেন পাবেন গুয়াহাটি থেকে। এ ছাড়া দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গে গুয়াহাটির বিমান যোগাযোগ তো আছেই।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) গুয়াহাটি স্টেশন থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে শিলং আসাই সুবিধা। সময় বাঁচে। পথে ধীরেসুস্থে বড়াপানি দেখে নিতে পারেন।

(২) লোকাল ট্যাক্সিতে শিলং ঘুরে নিয়ে ওই গাড়ি নিয়েই চেরাপুঞ্জি-মওলিননং ঘুরে এসে শিলং ছেড়ে দিন। শিলং থেকে বাসে ফিরুন গুয়াহাটি। শিলং-এ পুলিশবাজার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গাড়ি ভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে।

(৩) গাড়ি বা অটো ভাড়া করে ঘুরে নিন গুয়াহাটি।

upward journey starts. bomdila is still 75 kims away
পাহাড় চড়া শুরু। তখনও বমডিলা ৭৫ কিমি দূরে।

(৪) গুয়াহাটি থেকে ভালুকপং আসার জন্য বাস পাবেন, তবে তাতে সময় লাগবে। অরুণাচল রাজ্য পরিবহণেরও বাস পাওয়া যায়।

(৫) ভালুকপং-বমডিলা, বমডিলা-তাওয়াং, তাওয়াং-দিরাং প্রভৃতি রুটে বাস চলে। তবে সংখ্যায় কম। তাই বাসের উপর নির্ভর না করে অরুণাচল ভ্রমণের জন্য গুয়াহটি থেকে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। কার রেন্টালের জন্য গুয়াহাটিতে যোগাযোগ করতে পারেন – আউম অ্যাসোসিয়েটস (মেল করুন care.aumassociates@gmail.com, ফোন ৮৮৭৬৫৭৭৭৯০), আসাম অন হুইলস (৯৪৩৫১৯২৫৭০, ৮১৩৫০০০২৮৩), হিউজ কমার্শিয়াল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@hugecarrentals.com, ফোন ৯৪৩৫১০৮৪৮২), আইগুয়াহাটি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@iguwahati.com, ফোন ৯৪৩৫০১৬৮৩৩, ৯২০৭১০২২১৭), লেটস সি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (যোগাযোগ ০৯৪৩৫৩৮৬৩২৮)।

(৬) তবে তাওয়াং ঘোরা, বিশেষ করে বুম লা যাওয়ার জন্য সেখানকার স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করতে হতে পারে।

(৭) তাওয়াং-এর উচ্চতা ১০ হাজার ফুট। বুম লার উচ্চতা ১৪ হাজার ফুটেরও বেশি। তাই তাওয়াং ভ্রমণে তিন দিন রাখা হয়েছে। প্রথম দিন বমডিলা থেকে গিয়ে বিশ্রাম। দ্বিতীয় দিন তাওয়াং ও তার আশপাশ এবং তৃতীয় দিন বুম লা, পি টি সো লেক, মাধুরী লেক ইত্যাদি ঘুরে নিন।

কোথায় থাকবেন

শিলং শহর জুড়ে হোটেলের ছড়াছড়ি। মেঘালয় পর্যটনের হোটেল পাইনউড (০৩৬৪-২২২৩১১৬), হোটেল অর্কিড (০৩৬৪-২২২৪৯৩৩)। অনলাইনে বুক করতে পারেন mtdc.nic.in। চেরাপুঞ্জিতে থাকার ভালো জায়গা চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসর্ট (০৯৪৩৬১১৫৯২৫) ।

hotel pinewood, shillong
হোটেল পাইনউড।

গুয়াহাটি স্টেশনের কাছেই রয়েছে অসম পর্যটক উন্নয়ন নিগমের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ। যোগাযোগ ০৩৬১-২৫৪৪৪৭৫ । ভালুকপং-এও আছে অসম পর্যটনের টুরিস্ট লজ। যোগাযোগ ০৩৭৮২-২৩৪৭৮৮, ৯৯৫৪১৯১২০২ । তেজপুরে থাকার জন্যও রয়েছে অসম পর্যটনের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ, যোগাযোগ ০৩৭১২-২২২৫৯৬৩৯/২২২৯৫০৯৪/২২২৯৮৩৩১। অসম পর্যটনের কলকাতা অফিসে যোগাযোগ ০৩৩-২২২৯৫০৯৪

অরুণাচলে বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য হোটেল, হোমস্টের জন্য দেখুন www.arunachaltourism.com । আরও হোটেলের সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq, tripadvisor ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে। বমডিলায় থাকতে পারেন বমডিলা মন্যাস্টেরি গেস্টহাউসে। যোগাযোগ ০৩৭৮২-২২৩২৩২

মনে রাখবেন

(১) চেরাপুঞ্জিতে ডবল ডেকার রুট ব্রিজ যেতে হলে সিঁড়ি দিয়ে ২৫০০ ফুট নামতে হবে আবার উঠে আসতে হবে। হাঁটুর জোর থাকলেই এ পথে যাবেন, নচেৎ নয়।

(২) শিলং-এ জেল রোডে অবস্থিত ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টারে (০৩৬৪-২২২৬২২০) মেঘালয় ঘোরার তথ্য পেতে পারেন।

guwahati-shillong road
গুয়াহাটি থেকে শিলং-এর রাস্তা।

(৩) ওয়াংখার বাটারফ্লাই মিউজিয়াম শনি ও রবিবার বন্ধ থাকে।

(৪) গুয়াহাটিতে কামাখ্যা মন্দিরের খোলা-বন্ধের সময় আগাম জেনে নিলে বেড়ানোর প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।

(৫) উমানন্দ মন্দির সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা।

(৬) অরুণাচল ভ্রমণের জন্য ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) সংগ্রহ করতে হবে। কলকাতা, দিল্লি, গুয়াহাটি, শিলং, তেজপুর, ডিব্রুগড়, নর্থ লখিমপুর, যোরহাটে অরুণাচল সরকারের ডেপুটি রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস থেকে আইএলপি সংগ্রহ করতে হয়। কলকাতা অফিসের ঠিকানা The Deputy Resident Commissioner, Govt. of Arunachal Pradesh, CE-109, Sector-1, Salt Lake City, Kolkata. 033-23341243/ 23589865 । অনলাইনে আবেদন করতে পারেন www.arunachaltourism.com

আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের বাছাই : গন্তব্য উত্তর-পূর্ব / ১

(৭) তাওয়াং থেকে বুম লা যাওয়ার জন্য সেনা বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয় গাড়িচালকরা এই অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করেন।

(৮) যদি মনে হয় এই ভ্রমণসূচি সময়সাপেক্ষ, তা হলে মেঘালয় বা গুয়াহাটি ভ্রমণ বাদ দিয়ে দিতে পারেন। কলকাতা থেকে ভোরের ফ্লাইটে গুয়াহাটি এসে সে দিন শিলং পৌঁছে গেলে ভ্রমণসূচি এক দিন কমে যায়।

(৯) যথেষ্ট শীতবস্ত্র ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ঠেকাতে ওষুধপত্র নেবেন।

(১০) ট্রেনের সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in।

ভ্রমণ- ছক ২ : অরুণাচল

প্রথম দিন – যেখান থেকেই আসুন এ দিনটা গুয়াহাটিতে কাটান। কারণ পরের দিন খুব ভোরে যাত্রা। সময় থাকলে কামাখ্যা মন্দির ঘুরে আসুন।

দ্বিতীয় দিন – চলুন নামেরি, তেজপুর হয়ে। গুয়াহাটি থেকে তেজপুর ১৮৫ কিমি। পথে প্রাতরাশ সেরে তেজপুর আসতে ঘণ্টা পাঁচেক সময় লাগবে। সেখান থেকে নামেরি ৩৮ কিমি, ভালুকপং-এর পথে। রাত্রিবাস নামেরি।

তৃতীয় দিন – আজও থাকুন নামেরিতে। উপভোগ করুন নামেরি ন্যাশনাল পার্ক। সশস্ত্র গার্ড নিয়ে জঙ্গলে হাঁটুন। জিয়া ভরলি নদীতে র‍্যাফটিং করুন।

chilipam monastery
চিলিপাম মন্যাস্টেরি।

চতুর্থ দিন – সকালেই বেড়িয়ে পড়ুন, গন্তব্য বমডিলা (২৫৩০ মিটার), দূরত্ব ১২১ কিমি। দেখে নিন বমডিলা মন্যাস্টেরি, আপার গোম্পা, লোয়ার গোম্পা, বমডিলা ভিউ পয়েন্ট, আর আর হিল, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট সেন্টার, চিলিপাম মন্যাস্টেরি (বমডিলা আসার পথে দেখা নেওয়া যায়। টেঙ্গা মার্কেট থেকে ব্রিজ পেরিয়ে রূপা ভ্যালির পথে, বমডিলা থেকে ২৮ কিমি) ইত্যাদি। রাত্রিবাস বমডিলা।

পঞ্চম দিন – চলুন তাওয়াং (৩০৪৮ মিটার), দূরত্ব ১৭১ কিমি। পথে পড়বে ৪২১৫ মিটার উঁচু সেলা পাস। দেখে নিন সেলা লেক। তাওয়াং শহরে ঢোকার ২৫ কিমি আগে পড়বে নুরানাং ফলস্‌, ১৭-১৮ কিমি আগে জসবন্ত গড়, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিক জসবন্ত সিং-এর স্মৃতিতে তৈরি স্মারক। রাত্রিবাস তাওয়াং।

ষষ্ঠ দিন – এ দিন দেখে নিন তাওয়াং মন্যাস্টেরি (পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম, লাসার পরেই। রয়েছে মিউজিয়াম, বুদ্ধের ২০ ফুট উঁচু মূর্তি ইত্যাদি। ওপর থেকে তাওয়াং শহরের অভূতপূর্ব দৃশ্য), তাওয়াং ওঅর মেমোরিয়াল (সিটি সেন্টার থেকে ১ কিমি, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতিতে তৈরি স্মারক স্তম্ভ), উরগেলিং গোম্পা (তাওয়াং শহরেই, ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থল)। রাত্রিবাস তাওয়াং।

the road to bum la from tawang
তাওয়াং থেকে বুম লার পথ।

সপ্তম দিন – চলুন ভারত-চিন সীমান্তে বুম লা ও দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা। যাওয়া-আসার পথে দেখে নিন নাগুলা লেক, পি টি সো লেক ও মাধুরী লেক (আরও এক নাম সাংতেসর লেক। মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ফিল্ম ‘কোয়লা’র শুটিং হওয়ার পর এই লেক মাধুরী লেক হিসাবে পরিচিত)। রাত্রিবাস তাওয়াং।

অষ্টম দিন – চলুন প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য, মনপাদের আবাসভূমি জেমিথাং, তাওয়াং থেকে ৮০ কিমি। দেখে নিন ১২ শতকের গোরসাম চর্তেন (স্তূপ)

নবম দিন – চলে আসুন দিরাং (৪৯০০ ফুট), দূরত্ব ১২৯ কিমি। দিরাং নদীর পাড়ে দিরাং শহর। রাত্রিবাস দিরাং।

দশম দিন – আজও থাকুন দিরাং-এ। দু’ দিনে দেখে নিন –

দেখে নিন আপেল বাগিচা, অর্কিড রিসার্চ সেন্টার, ইয়াক রিসার্চ সেন্টার, উষ্ণ জলের কুণ্ড (৫ কিমি দূরে), ৫০০ বছরের পুরোনো কালচক্র গোম্পা, দিরাং জং, সাংটি ভ্যালি (৭ কিমি) ইত্যাদি।

sangti valley
সাংটি ভ্যালি।

একাদশ দিন – চলুন তেজপুর। রাত্রিবাস।

দ্বাদশ দিন – খুব সকালে তেজপুর থেকে রওনা হয়ে গুয়াহাটি ফিরে ঘরপানে চলুন। রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে পরের দিন ভোর ৫:১০-এ হাওড়া পৌঁছোয় সরাইঘাট এক্সপ্রেস। কামরূপ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৭.৪৫-এ গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৫:৪৫-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ১০:৫৫-এ গুয়াহাটি  থেকে ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধ্যা ৭:২৫-এ। দেশের অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার জন্যও ট্রেন পাবেন গুয়াহাটি থেকে। এ ছাড়া দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গে গুয়াহাটির বিমান যোগাযোগ তো আছেই।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) অরুণাচল ভ্রমণের জন্য গুয়াহাটি থেকে গাড়ি নেওয়া ভালো। এতে প্রতিদিন গাড়ি বাবদ খরচ হয়তো কিছু বেশি পড়বে, কিন্তু ভালো চালক পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রাস্তায় ভালো চালক পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্তত একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে, ড্রিঙ্ক করে যেন গাড়ি না চালায়।

(২) তাওয়াং-এর উচ্চতা ১০ হাজার ফুট। বুম লার উচ্চতা ১৪ হাজার ফুটেরও বেশি। তাই তাওয়াং ভ্রমণে চার দিন রাখা হয়েছে। প্রথম দিন বমডিলা থেকে গিয়ে বিশ্রাম। দ্বিতীয় দিন তাওয়াং ও তার আশপাশ, তৃতীয় দিন বুম লা, পি টি সো লেক, মাধুরী লেক ইত্যাদি ঘুরে নিন। শেষ দিনের জন্য জেমিথাং। ধীরেসুস্থে ঘুরুন।

(৩) কার রেন্টালের জন্য গুয়াহাটিতে যোগাযোগ করতে পারেন – আউম অ্যাসোসিয়েটস (মেল করুন care.aumassociates@gmail.com, ফোন ৮৮৭৬৫৭৭৭৯০), আসাম অন হুইলস (৯৪৩৫১৯২৫৭০, ৮১৩৫০০০২৮৩), হিউজ কমার্শিয়াল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@hugecarrentals.com, ফোন ৯৪৩৫১০৮৪৮২), আইগুয়াহাটি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@iguwahati.com, ফোন ৯৪৩৫০১৬৮৩৩, ৯২০৭১০২২১৭), লেটস সি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (যোগাযোগ ০৯৪৩৫৩৮৬৩২৮)।

nameri eco camp
নামেরি ইকো ক্যাম্প।
কোথায় থাকবেন

নামেরিতে থাকুন নামেরি ইকো ক্যাম্পে। বুকিং-এর জন্য দেখুন ওয়েবসাইট www.nameri.co.in বমডিলায় থাকতে পারেন বমডিলা মন্যাস্টেরি গেস্টহাউসে। যোগাযোগ ০৩৭৮২-২২৩২৩২

তেজপুরে থাকার জন্যও রয়েছে অসম পর্যটনের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ, যোগাযোগ ০৩৭১২-২২২৫৯৬৩৯/২২২৯৫০৯/২২২৯৮৩৩১। অসম পর্যটনের কলকাতা অফিসে যোগাযোগ ০৩৩-২২২৯৫০৯৪

অরুণাচলে বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য হোটেল, হোমস্টের জন্য দেখুন www.arunachaltourism.com । আরও হোটেলের সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq, tripadvisor ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

মনে রাখবেন

(১) নামেরিতে ঘোরার জন্য সশস্ত্র গার্ড, নদীতে র‍্যাফটিং-এর ব্যবস্থা রিসর্ট থেকেই করে নেওয়া যাবে।

river rafting in nameri
জিয়া ভরলিতে রিভার র‍্যাফটিং।

(২) অরুণাচল ভ্রমণের জন্য ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) সংগ্রহ করতে হবে। কলকাতা, দিল্লি, গুয়াহাটি, শিলং, তেজপুর, ডিব্রুগড়, নর্থ লখিমপুর, যোরহাটে অরুণাচল সরকারের ডেপুটি রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস থেকে আইএলপি সংগ্রহ করতে হয়। কলকাতা অফিসের ঠিকানা The Deputy Resident Commissioner, Govt. of Arunachal Pradesh, CE-109, Sector-1, Salt Lake City, Kolkata. 033-23341243/ 23589865 । অনলাইনে আবেদন করতে পারেন www.arunachaltourism.com

(৩) তাওয়াং থেকে বুম লা যাওয়ার জন্য সেনা বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয় গাড়িচালকরা এই অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করেন।

(৪) যথেষ্ট শীতবস্ত্র ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ঠেকাতে ওষুধপত্র নেবেন।

(৫) ট্রেনের সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *