৮ জুন থেকে হোটেল খোলার অনুমতি, কী কী বিধি মানতে হবে দেখে নিন

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাস জনিত পরিস্থিতির জেরে সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আনলক ১.০ পর্ব। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্যবিধি অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করার ব্যাপারে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হোটেল/রিসর্ট/হোমস্টে খোলার ব্যাপারটি। দু’ মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন চলায় দেশের পর্যটন শিল্প মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে। সেই একটু একটু করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হিসাবে আগামী ৮ জুন থেকে হোটেল খোলার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার,

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক স্বাস্থ্যরক্ষার নির্দেশিকা তথা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) প্রকাশ করেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পর্যটন ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য বা চিকিৎসার উদ্দেশ্য ছাড়া ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক, অসুস্থতা আছে এমন ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং ১০ বছরের কম বয়স্কদের বাড়ির বাইরে যেতে বারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো হোটেল/রিসর্ট/হোমস্টেতেও যে সব নিয়ম মানতেই হবে, তা হল

(১) ফেস কভার/মাস্ক ব্যবহার করা।

(২) ৬ ফুটের শারীরিক দূরত্ব রাখা।

(৩) সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া (অন্তত ৪০ থেকে ৬০ সেকেন্ড); যেখানে সম্ভব অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার (অন্তত পক্ষে ২০ সেকেন্ড) ব্যবহার করা।

(৪) হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু পেপার বা রুমাল বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা; টিস্যু পেপার ব্যবহার করলে তা ঠিক জায়গায় ফেলে দেওয়া।

(৫) নিজের শরীরের দিকে নজর রাখা এবং অসুস্থতা রাজ্য বা জেলা হেল্প লাইনে যোগাযোগ করা,

(৬) যত্রতত্র থুথু ফেলা চলবে না।

(৭) আরোগ্য সেতু অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করা।

এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট ভাবে হোটেল/রিসর্ট/হোমস্টের ক্ষেত্রে যে সব নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হল –          

(১) ঢোকার মুখে হাতের স্বাস্থ্যরক্ষা (স্যানিটাইজার ডিসপেনসার) এবং থার্মাল স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(২) উপসর্গ নেই এমন অতিথিদের ও কর্মীদের হোটেলে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে।

(৩) ফেস কভার/মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা থাকলে তবেই হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হবে এবং তা হোটেলে সর্বক্ষণ ব্যবহার করতে হবে।

(৪) শারীরিক দূরত্ব বিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য হোটেলে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী থাকতে হবে।

(৫) কর্মীরা গ্লাভস পরবেন এবং অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন।

(৬) বয়স্ক কর্মী, অন্তঃসত্ত্বা কর্মী এবং বা চিকিৎসায় আছেন এমন কর্মীদের ক্ষেত্রে হোটেল পরিচালন কর্তৃপক্ষ বেশি সতর্ক থাকবেন। তাঁরা যাতে জনগণের সামনাসামনি না আসেন তা দেখতে হবে।

(৭) হোটেলে বড়ো সমাবেশ চলবে না। যেখানে ভিড় হতে পারে, যেমন পার্কিং লট, সে সব জায়গায়্ শারীরিক দূরত্বের বিধি মেনে চলার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(৮) পার্কিং-এ যাঁরা পরিচর্যার কাজে যে সব কর্মী থাকবেন, তাঁরা ফেস কভার/মাস্ক ও গ্লাভস পরে কাজ করবেন। গাড়ির স্টিয়ারিং, দরজার হ্যান্ডেল, চাবি ইত্যাদি যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

(৯) অতিথি, কর্মী ও মালপত্র পরিবহণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রবেশ ও প্রস্থানের গেট যতটা সম্ভব আলাদা করতে হবে। প্রবেশের সময় বা হোটেলের ভিতরে কোথাও লাইন দিতে হলে ৬ ফুটের শারীরিক দূরত্ব রাখতেই হবে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে মার্কিং করে দিতে হবে।

(১০) এলিভেটরে এক এক বারে কত জন উঠবেন তা বেঁধে দিতে হবে। এলকালেটরে এক একটা ধাপ ছেড়ে এক এক জন করে দাঁড়ালে ভালো হয়।

(১১) রিসেপশনে অতিথিকে তাঁর সম্পর্কে বিশদ তথ্য (ভ্রমণের ইতিহাস, শরীরের অবস্থা ইত্যাদি) জানাতে হবে এবং আইডি প্রুফ জমা দিতে হবে। তাঁকে একটি ডিক্লারেশন ফর্ম জমা করতে হবে।

(১২) কী ভাবে কোভিড ১৯ ঠেকানো যায় সে সম্পর্কে স্ট্যান্ডি, পোস্টার, এভি মিডিয়া ইত্যাদি ভালো করে প্রদর্শিত করতে হবে।

(১৩) রিসেপশনে অতিথিদের ব্যবহারের জন্য স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ফর্ম ফিল আপ করার আগে ও পরে অতিথি স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নেবেন।

(১৪) চেক ইন ও চেক আউটের জন্য হোটেলে সংস্পর্শহীন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যেমন কিউআর কোডস, অনলাইন ফর্ম, ই ওয়ালেটের মতো ডিজিটাল পেমেন্ট ইত্যাদি।

(১৫) ঘরে লাগেজ পাঠানোর আগে তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

(১৬) বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা বা চিকিৎসা চলছে এমন অতিথিরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকবেন।

(১৭) কনটেনমেন্ট জোনে রয়েছে এমন এলাকায় সফর করতে অতিথিদের বারণ করা হচ্ছে।

(১৮) মালপত্র, তালিকাভিত্তিক জিনিসপত্র, অন্যান্য সরবরাহ করা জিনিসপত্র দেওয়ানেওয়ার সময় হোটেলকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যথাযথ ভাবে লাইন পরিচালনা করতে হবে এবং জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(১৯) কর্মী এবং অতিথিদের জন্য্ ফেস কভার/মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান যথেষ্ট পরিমাণে হোটেলে রেখে দিতে হবে।

(২০) রেস্তোরাঁর জন্য যে বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তা মেনে চলতে হবে – যেমন, শারীরিক দূরত্ব মেনে বসা, ডিসপোজেবল মেনু, ডিসপোজেবল পেপার ন্যাপকিন, সংস্পর্শে না গিয়ে খাবার অর্ডার দেওয়া, ডিজিট্যাল পেমেন্ট, শারীরিক দূরত্ব মেনে বুফে সার্ভিস ইত্যাদি।  

(২১) এক জায়গায় বসে খাওয়ার চেয়ে রুম সার্ভিস বা টেক অ্যাওয়ে-তে উৎসাহ দেওয়া। যাঁরা খাবার দেবেন তাঁরা অতিথির দরজায় খাবার রেখে আসবেন, হাতে হাতে দেবেন না।

(২২) রুম সার্ভিস চাইলে ইন্টারকম বা মোবাইলে জানাতে হবে এবং রুম সার্ভিসের সময় যথাযথ শারীরিক দূরত্ব রাখতে হবে।

(২৩) খেলাধুলার জায়গা, আর্কেড, শিশুদের খেলার জায়গা বন্ধ থাকবে।

(২৪) এয়ার কন্ডিশনিং-এর ক্ষেত্রে ঘরের তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে হবে; আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে। ঘরে যতটা সম্ভব টাটকা বাতাস যাতে খেলে, ক্রস ভেন্টিলেশন যাতে থাকে তা দেখতে হবে।

(২৫) জল পান করার জায়গা, হাত ধোয়ার জায়গা, স্নান ও প্রাতঃকৃত্য করার জায়গায় যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(২৬) হোটেলের সব জায়গা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে এবং দরজার হাতল, এলিভেটরের বোতাম, হ্যান্ড রেল, বেঞ্চ, ওয়াশরুমের বিভিন্ন বস্তু নিয়মিত জীবাণুমুক্ত (১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সহযোগে) করতে হবে।

(২৭) অতিথিদের ব্যবহার করা ফেস কভার/মাস্ক, গ্লাভস যথাযথ ভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।

(২৮) নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে ওয়াশরুম যাতে খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করা হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

(২৯) অতিথি চলে গেলেও ঘর ও অন্যান্য সার্ভিসের জায়গা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

(৩০) কিচেনে কর্মীরা শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলবেন এবং নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে কিচেনের জায়গা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

(৩১) হোটেলে কাউকে অসুস্থ বলে সন্দেহ হলে বা কেউ নিশ্চিত ভাবে অসুস্থ হলে –

(ক) সেই ব্যক্তিকে একটি ঘরে বা একটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে;

(খ) যতক্ষণ না কোনো ডাক্তার আসছেন তাঁকে ফেস কভার/মাস্ক দিন;

(গ) অবিলম্বে কাছাকাছি হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা রাজ্য বা জেলা হেল্প লাইনে যোগাযোগ  যোগাযোগ করুন;

(ঘ) দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী সেই ব্যক্তির ঝুঁকির মূল্যায়ন করবেন এবং সেইমতো ব্যবস্থা নেওতা হবে; এবং

(ঙ) সেই ব্যক্তি যদি কোভিড ১৯ পজিটিভ হন তা হলে পুরো হোটেল চত্বর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *