বাড়ুক বাস, তৈরি হোক শৌচাগার, তা হলে পর্যটক বাড়বে ডেলোয়, দাবি স্থানীয়দের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডেলো (কালিম্পং): শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এর বাসের কোনো অভাব নেই। পর্যটকরা সকালে শিলিগুড়ি থেকে এই সব জায়গায় গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু ডেলোর সঙ্গে শিলিগুড়ির সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ফলে ইচ্ছে করলেও কেউ এক দিনে ডেলোয় গিয়ে ফিরে আসতে পারবেন না।

সমস্যা আরও আছে। ডেলোয় কোনো শৌচাগার নেই। ফলে গাড়ি নিয়ে যাঁরা ছুটির দিনে যান তাঁরাও সমস্যায় পড়েন। ট্যুর অপারেটর সংগঠনের দাবি পর্যটকদের স্বার্থে অবিলম্বে এই ব্যবস্থাগুলি চালু করতে হবে।

এখন শিলিগুড়ি থেকে ডেলোর মধ্যে একটি মাত্র সরকারি বাস চলাচল করে। সকাল সাড়ে ছটায় শিলিগুড়ি থেকে ছেড়ে বেলা সাড়ে নটার মধ্যে বাসটি ডেলোয় পৌঁছোয়। আবার বেলা সাড়ে এগারোটার সময় ডেলো থেকে ছেড়ে বাসটি বেলা তিনটের মধ্যে শিলিগুড়িতে ফিরে আসে। কেউ যদি মনে করেন সকালে গিয়ে ডেলোয় সারা দিন কাটিয়ে বিকেলে ফিরবেন তার উপায় নেই। উত্তরবঙ্গের ট্যুর আপারেটরদের সংগঠনের সদস্যরা মনে করেন, সকালে গিয়ে বিকেলে ফেরার ব্যবস্থা থাকলে ডেলোয় পর্যটকদের ভিড় বাড়বে।

জলপাইগুড়ি জেলা ট্যুর অপারেটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক সব্যসাচী রায় বলেন, “আমাদের কাছে বহু পর্যটক এক দিনে ডেলোয় গিয়ে ফিরে আসা যায় কিনা জানতে আসেন। আমরা না বলে দিই। ডেলোয় যাওয়ার জন্য যদি আরও একটি বাস চালু করা যায় তা হলে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। ডেলোয় কোনো শৌচাগার নেই। এটাও একটা বড়ো সমস্যা।”

ভোরের কাঞ্চনজঙ্ঘায় পড়া সূর্যের আলো শুধু টাইগার হিল থেকেই দেখা যায় না, কালিম্পং-এর এই ডেলো থেকেও দেখা যায়। তবে টাইগার হিলে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি সূর্যকেও দেখা যায়, ডেলোয় সে রকম নয়। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় পড়া সুর্যের আলো এবং তার ফলে কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙ পাল্টানো দেখা যায়। ডেলোয় যাঁরা রাত কাটান, তাঁরাই এই দৃশ্য উপভোগ করেন।

কিন্তু আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখানে দিনভর আপনার মন ভুলিয়ে দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেটাই বা কম কি? ৫ হাজার ৫৯০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ডেলোয় পার্কের মধ্যে ছাউনিতে ঢাকা বসার জায়গা আছে। সেখানে বসে দিনভর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। কুয়াশায় ঢাকা ডেলোরও একটা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে।

ডেলো থেকে দেখা যাচ্ছে তিস্তা।

ডেলোয় সরকারি ট্যুরিষ্ট লজ সংলগ্ন এলাকায় যে পার্ক আছে তার গা বেয়ে এঁকেবেঁকে পাথরে তৈরি পায়ে চলা পথ আছে। পার্কে ঘুরতে গিয়েও এক দিকে সঙ্গী হবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অনেক দূরে নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে সরু ধারার তিস্তা। পার্কে গাছগাছালি, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, বসার জায়গা সবই আছে। পরিষ্কার দিনে এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপস্থিতি অন্য দিকে তাকাতেই দেবে না। সূর্য মধ্যগগন থেকে যখন পশ্চিমে হেলতে শুরু করবে কাঞ্চনজঙ্ঘার আর এক দিকে তখন আলো পড়বে।

তবে সমস্যা রয়েছে ডেলোয়। শৌচাগারের অভাব ছাড়াও এখানে ভালো কোনো রেস্তোঁরা নেই। এক দিনে গিয়ে ফিরে আসতে চাইলে খাবারদবার নিয়ে যাওয়াই ভালো। স্থানীয় বাসিন্দা বুধন রাই, দোকানের মালিক মেনকা ছেত্রী বলেন, “এই তো পিকনিকের দিন শুরু হচ্ছে। এখন রোজই গাড়ি নিয়ে প্রচুর পর্যটক আসবেন। তাঁরা সারা দিন এখানে কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফিরে যান। নিজেরাই খাবার নিয়ে আসেন। এখানে স্ন্যাক্স কিনতে হলে আমাদের কাছে আসেন।”

কিন্তু প্রকৃতি ডাক দিলে তখনই সমস্যা হয়। রাজ্য সরকারি এবং ডেলো পার্কের তত্ত্বাবধায়ক গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) কাছে তাঁদের আবেদন এখানে কয়েকটি শৌচাগার হোক। বাসের সংখ্যাও বাড়ুক। তা হলে সাধারণ পর্যটকের আরও আনাগোনা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *