অচেনা কলকাতা, পর্ব ১

পর্ব ১

বটতলার কাঠখোদাই শিল্প। ঐতিহাসিক বটতলার ছাপাখানা ও কাঠখোদাই ছবি উনিশ শতকের কলকাতায় এক নতুন উদীয়মান নিদর্শন। শহরে সেই ছাপাখানার হাত ধরে মুদ্রণ শিল্পে এক বিপ্লব এলো।

কথায় বলে,
ধন্য হে কলিকাতা ধন্য হে তুমি,
যত কিছু নতুনের তুমি জন্মভূমি।

গরানহাটা অঞ্চলে নদীপথে আসত কাঠ। কারিগররা সেই কাঠ নিয়ে যেতেন বটতলা অঞ্চলে। এরপর কাঠের ব্লক খোদাই করে কারিগরি দক্ষতায় কাগজে লেখা ও ছবি বের হতো। আজও সেই অঞ্চলে ঘুরেফিরে চিৎপুরে রাস্তার দুপাশে দেখা যায় কিছু পুরোনো কাঠখোদাই এর দোকান। পঞ্চানন কর্মকার ছিলেন ওই সময়ে এক স্বনামধন্য কাঠখোদাই শিল্পী।

বটতলা :
দেশীয় সাহিত্য, সামাজিক প্রহসন, পঞ্জিকা, বেশ্যারহস্য, প্রেমবিলাস, অন্নদামঙ্গল, পুরাণের কাহিনী বটতলায় ছাপা হতে শুরু হলো। খুব সস্তায় সেই বই বিক্রি হতো। তৎকালীন অভিজাত বাবু শ্রেণীর মানুষ বটতলার সাহিত্য রসে সুরা পান করে নিমজ্জিত থাকতেন। তাই দেখে অনেকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ছাড়তেন না। বলতেন, বটতলার লেখনী অশ্লীল সাহিত্য। ভদ্রবাবুরা বিগড়ে গেলেন। শুরু হল বাবুদের মাত্রাতিরিক্ত জীবন। উনিশ শতকে চিৎপুর রোডের পাশে এক বিশাল বট গাছ ছিল। গাছটি আজ আর নেই। সেই বটতলায় কলকাতায় প্রথম প্রকাশকদের হাত ধরে ছাপাখানা খোলা হয়।

সন্দেশের ছাঁচ :
কাঠের তৈরি সন্দেশের ছাঁচ। নানারকম নকশার হয় সন্দেশের ছাঁচ। বিভিন্ন ধরনের পিঠে ও সন্দেশ এই ছাঁচ দিয়ে তৈরি করা যায়। তালের শাঁস, পদ্মচিনি, শঙ্খ, মাছ, চন্দ্রপুলি, প্রজাপতি এই সমস্ত সন্দেশের ছাঁচ দিয়ে তৈরি হয়। কাঠ খোদাই করে এই সকল ছাঁচ তৈরি হয়।

বইমেলায় বটতলা :
সেকালের এই দেশীয় শিল্প আজকের নাগরিক সমাজ বোধহয় একেবারে ভুলে যায়নি। সেই বিষয় সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। ৪৮ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তক মেলায় বহু দুষ্প্রাপ্য কাঠখোদাই ছবি নিয়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। ‘উনিশ শতকের খোদাই চিত্র’ প্রদর্শনী। আগামী ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত চলবে। ঘুরে আসুন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিশেষ স্টলটি।

বটতলা কিভাবে যাবেন :
হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সড়কপথে গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টপেজে নামুন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে চিৎপুর রোড চলে আসুন। এরপর গরানহাটা স্ট্রিট ধরে বটতলা অঞ্চল দেখে নিন।

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *