ঠাকুর দেখা: উত্তর ও মধ্য কলকাতা

bagbazar sarbojanin

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: কলকাতার রাস্তায় জনজোয়ার। জোরকদমে ঠাকুর দেখা চলছে। সঙ্গে আবহাওয়াও সহযোগিতা করছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হলেও ঠাকুর দেখায় তেমন ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে না। গরম আছে বটে, তা বলে প্রতিমাদর্শন তো আর থেমে থাকবে না। পূর্ব কলকাতা আর সল্ট লেক তো ঘোরা হয়েছে। এ বার কোথা থেকে শুরু করবেন ভাবছেন? চিন্তা নেই। পুজো পরিক্রমায় সাহায্য করছে ভ্রমণ অনলাইন। এ বার ঠাকুর দেখা না হয় উত্তর কলকাতাতেই হোক। শুরু করুন বাগবাজার দিয়ে।

বাগবাজার সর্বজনীন

বাগবাজারের পুজো এ বার ১০১ বছরে পড়ল। প্রতিবারের মতোই বিশাল প্রতিমা। একচালা ঠাকুর, ডাকের সাজ। সামনের মাঠে বিশাল মেলা। গিরিশ মঞ্চের পাশে মাঠের ওপর মণ্ডপ।

কুমোরটুলি সর্বজনীন

বাগবাজার দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে চলে আসুন কুমোরটুলি সর্বজনীনে। এদের এ বছরের থিম ‘মাকে বলো’। ইচ্ছাপূরণের নানা উপাদান দিয়ে সেজেছে মণ্ডপ। ফুচকাওয়ালার বেতের স্ট্যান্ড দিয়ে হয়েছে সাজসজ্জা। প্রতিমা সাবেক।   

কুমোরটুলি পার্ক

kumortuli parkকুমোরটুলি সর্বজনীন দেখে রবীন্দ্র সরণিতে আসুন। আরও দক্ষিণে যেতে ডান দিকের গলিতে কুমোরটুলি পার্কের মণ্ডপ। ২৬তম বর্ষে এদের পুজো দেখতে এসেছে ভিন গ্রহের প্রাণীরা। তাই মণ্ডপের ভিতরে অসংখ্য ভিন গ্রহের জীব। তারা অবশ্য স্থির নয়, নড়াচড়া করে নানা কাজ করছে। মন্ডপটা বাইরে দেখলে মনে হবে পৃথিবী, কিন্তু ভিতরে ঢুকলে মনে হবে অন্য গ্রহ। ঘোড়ামুখী সিংহে আসীন সাবেক প্রতিমা।

হাটখোলা গোঁসাইপাড়া

৮২তম বর্ষে হাটখোলা গোঁসাইপাড়া কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে বার্তা দিচ্ছে। মণ্ডপে ঢুকতেই মাটি দিয়ে তৈরি লাল মাতৃজঠর। পাশাপাশি রয়েছে শিশু জন্মের বৈজ্ঞানিক ছবি। প্রতিমা এখানে মানুষের অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাচ্ছে। শক্তিরূপিণী দুর্গার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী মা নতুন শক্তি পেয়ে সন্তানধারণে সক্ষম হচ্ছেন। বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে এমনই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।    কুমোরটুলি পার্ক দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে আরও দক্ষিণে এলে পেয়ে যাবেন হাটখোলা গোঁসাইপাড়া। ল্যান্ডমার্ক হিসেবে রয়েছে বি কে পাল অর্থাৎ বটকৃষ্ণ পালের বাড়ি।

আহিরীটোলা সর্বজনীন

ahiritola sarbojanin

৮০ বছরে পা দিল আহিরীটোলা সর্বজনীন। এ বারের তাদের ট্যাগলাইন ‘অজান্তে হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়’। এ বারে তাদের থিম গুজরাতের ‘রানি কি ভাও’। মণ্ডপশয্যায় তুলে ধরা হয়েছে গুজরাতের এগারো শতকের বাউলি প্রথাকে। প্রতিমাতেও রয়েছে চমক। মাতৃপ্রতিমা পাথরের। ওড়িশার একটি আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তৈরি করেছেন এই প্রতিমা।হাটখোলা গোঁসাইপাড়া দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে আরও দক্ষিণে এসে বিকে পাল আভেনিউ ধরে গঙ্গার দিকে গেলে আহিরিটোলার মোড়েই মণ্ডপ।

নিমতলা সর্বজনীন

৫৪তম বছরে এদেরও চিন্তায় পরিবেশ। থিমের নাম ‘শালবনী’। জল ও প্রকৃতিকে বাঁচানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে এই থিমের মাধ্যমে। মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাতে আঁকা শিল্প মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমা। আহিরীটোলা থেকে আরও দক্ষিণে গিয়ে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের ওপরই মণ্ডপ।

রবীন্দ্র কানন সর্বজনীন

নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ধরে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউয়ের দিকে আসুন।নিমতলা ঘাট স্ট্রিট আর রবীন্দ্র সরণির ক্রসিং-এই পার্কের মধ্যে মণ্ডপ। ৭৯ বছরের এই পুজো। মণ্ডপে উপহার দেওয়া হয়েছে মাদুরাইয়ের একটি মণ্ডপ। সাবেকি ধাঁচের প্রতিমা, তাতে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের ছোঁয়া।

মৈত্রী সংঘ (যতীন মৈত্র পার্ক)

৭৯তম বর্ষের মণ্ডপ সেজেছে একটি মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের বাইরে ও অন্দরসজ্জায় রেকসিনের কাজ। প্রতিমায় মেলবন্ধন ঘটেছে সাবেকিয়ানা ও রাজস্থানি ঘরানার। নবমীতে দর্শনার্থীদের জন্য ভোগের ব্যবস্থা থাকছে। রবীন্দ্র কানন দেখে এইটু উত্তরে চলে আসুন। যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউয়ের ওপর যতীন মৈত্র পার্কের ভেতর পুজো।

মহম্মদ আলি পার্ক

চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ ও মহাত্মা গান্ধী রোডের ক্রসিংয়ের কাছে মহম্মদ আলি পার্ক। না, এখানে এ বার পুজো হচ্ছে না। পার্কের নীচে ব্রিটিশ আমলের জলাধার আছে। সেই জলাধারের সংস্কার দ্রুত করা দরকার। তাই ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়া এই পুজো হচ্ছে পাশে দমকল ভবনে। অনেকেই জানেন না, এক সময়ে এই দমকল দফতরে দুর্গাপূজা হত বেশ ধুমধাম করে। প্রতিমা গড়তেন রমেশ পাল। এ বার সেই দমকল ভবনে মহম্মদ আলি পার্কের পুজো দেখে অনেক প্রবীণ নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। কেরলের মুরুগান প্রাসাদের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ।

কলেজ স্কোয়ার

college square৭২তম বছরে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে জোধপুরের উমেদ ভবনের আদলে। ভেতরে সাবেক দুর্গা। বিশাল ঝাড়লণ্ঠন। আলোকসজ্জায় রয়েছে অভিনবত্ব। কলেজ স্ট্রিটের উপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উলটো দিকে পার্কের ভেতর মণ্ডপ।

কানাইধর লেন অধিবাসীবৃন্দ

যেখানে আর্থিক বৈষম্য নেই, সামাজিক ভেদাভেদ নেই, হিংসা নেই – দর্শকদের এমনই এক রূপকথার জগতে পৌঁছে দিচ্ছে ৬৯ বছরে পড়া  থিম ‘কানাইধর লেন অধিবাসীবৃন্দ’। এক ফালি চাঁদে আসীন সপরিবার দেবী। আলোর খেলায় তৈরি হয়েছে মায়াময় পরিবেশ। কলেজ স্কোয়ারের পেছনে রাজা রামমোহন সরণির কাছে।

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা লেবুতলা পার্ক

৮৪ তম বর্ষে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দেবী দুর্গা মোড়া হয়েছে  ৫০ কেজি সোনায়। মায়ের গায়ে  ১১০ কেজি রুপোর গয়নাও। প্যান্ডেলেও রয়েছে চমক।  মায়াপুরের প্রস্তাবিত একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। ওই মণ্ডপ তৈরি করতে ১০ টন কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। শিয়ালদা অঞ্চলে লেবুতলা পার্কে মণ্ডপ।

শিয়ালদা রেলওয়ে অ্যাথলেটিক ক্লাব

৭২তম বর্ষে শিয়ালদা অ্যাথলেটিক ক্লাব শ্রদ্ধা জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের প্রতি।  শিয়ালদা স্টেশন বাসস্টপের কাছে গলির ভেতর মাঠের ওপর বিশাল মণ্ডপ।

চালতাবাগান

শিয়ালদা অ্যাথলেটিক ক্লাব দেখে উত্তরে চলুন। মানিকতলা মোড় থেকে বাঁ দিকে বিবেকানন্দ রোডে ঢুকুন। আমহার্স্ট স্ট্রিট ও বিবেকানন্দ রোডের ক্রসিং-এ মণ্ডপ। পুরোনো দিনের রাজা-জমিদারদের বজরার আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সেই সময়ে বিশাল বিশাল বজরা সাজানো হত নানান উপকরণে। ঠিক সে ভাবেই সাজানো হয়েছে চালতাবাগানের এই স্থলজ বজরা। রয়েছে দড়ির তৈরি সিঁড়ি। সাজানো হয়েছে লণ্ঠন ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে। বজরার মধ্যে রয়েছেন দেবী। জল ছাড়া কি বজরা চলে?। তাই আলোকসজ্জায় ও নানান ভাবে জলের রূপক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন ঠাকুর দেখা: পূর্ব কলকাতা ও সল্ট লেক

সিমলা ব্যায়াম সমিতি

বিবেকানন্দ রোড ধরে এগিয়ে যান। গিরিশ পার্কের কিছু আগে বাঁ দিকের রাস্তায় মণ্ডপ। ৯৪তম বছরে চিরাচরিত ঘরানাতেই পুজো হচ্ছে। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। প্রতিমাও সাবেকি ধাঁচের।

বিডন স্ট্রিট সর্বজনীন

সিমলা ব্যায়াম সমিতি দেখে একটু পিছিয়ে এসে বিধান সরণি ধরুন, উত্তরে এগিয়ে চলুন। বিডন স্ট্রিটের মোড়ে এসে বাঁ দিকে চলুন। বিডন স্ট্রিটের উপরেই মণ্ডপ। ৭৯তম বছরে সাবেকিয়ানায় ভরসা রাখা হয়েছে। বাঁকুড়ার টেরাকোটা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। একচালার সাবেক প্রতিমা।

হরিঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন

এ বছরে ৮০তম বর্ষে পা দিল হরিঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব। ৮০তম বর্ষে তাঁরা স্মরণ করছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। বিদ্যাসাগরের ২০০তম বর্ষ পূর্তির কথা মাথায় রেখে এদের এ বছরের থিম ‘বর্ণপরিচয়’। গোড়ায়  বর্ণপরিচয় বইটির যে চেহারা ছিল, তা তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে বর্ণমালা নিয়ে কাজ। বিদ্যাসাগর তো থাকছেনই। মণ্ডপে থিম থাকলেও প্রতি বছর হরি ঘোষ স্ট্রিটের প্রতিমা হয় সাবেক ধরনের। এ বারও তা-ই। কলেজ স্ট্রিটের দিকে যেতে বিধান সরণিতে হেদুয়া পার্ক বাসস্টপে নেমে উলটো দিকে বিডন স্ট্রিটে ঢুকে ডান হাতের প্রথম গলি হরি ঘোষ স্ট্রিট। একটু এগোলেই মণ্ডপ।

কাশীবোস লেন

kashi bose laneগোটা বিশ্ব জুড়ে চলছে জলসংকট নিয়ে তোলপাড়। জলের অভাবে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন। ধ্বংস হওয়ার মুখে গোটা পৃথিবী।  ৮২তম বর্ষে কাশীবোস লেনের থিম ‘অস্তিত্ব’। থিমের বিষয় ‘জলসংকট’। থিম অনুযায়ী মণ্ডপ বিভাজন করা হয়েছে। সভ্যতা গড়ে ওঠে একটি নদীর ধারে। মণ্ডপে ঢুকতেই দেখা যাচ্ছে জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেখানকার অবস্থা। দ্বিতীয় বিভাগে দেখা যাচ্ছে, জল না থাকলে সবাই জীবাশ্ময় পরিণত হবে, সেই অবস্থাটা। তৃতীয় বিভাগে রয়েছেন ‘মা’। সেখানে একটি গঙ্গার ঘাট দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি দেবী দুর্গাকে গঙ্গার সঙ্গে একাত্ম করা হয়েছে। গঙ্গাও এক জন দেবী, তিনি জলের দেবতা। সেই পুরো বিষয়কে এক সূত্রে গেঁথে গঙ্গারূপী দুর্গাকে আরাধনা করা হচ্ছে। দেবীর কাছে জলের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে, যাতে এই সংকট মোচন হয়। শ্যামবাজার থেকে হেদুয়ার দিকে যেতে কাশীবোস লেন বাস স্টপের উলটো পারে গলির ভেতর মণ্ডপ।

দর্জিপাড়া সর্বজনীন

কাশীবোস লেন দেখে চলে আসুন দর্জিপাড়া সর্বজনীনে। রূপবাণী বাসস্টপের কাছে লক্ষ্মীনারায়ণ চপের দোকানের গায়ে গলির ভেতরে ব্ল্যাকস্কোয়ার পার্কের মাঠে পুজো। একের স্বপ্নকে সকলের মধ্যে সঞ্চারিত করার উদ্দেশ্যে মেতেছে দর্জিপাড়া। সেখানে ইট-কাঠ-পাথর-কংক্রিটের নাগপাশ থেকে মানুষকে মুক্ত করে স্বপ্নের উড়ানে ভাসাতে চায় তারা। তাই ৮৮তম বর্ষের থিম ‘স্বপ্নের উড়ান’। নীল আকাশের পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের বুক চিরে উড়ে যাওয়া পাখির ডানায় ভর করে কলকাতাবাসীও চায়, মুক্ত আকাশ, শুদ্ধ বাতাস, সবুজ চারিপাশ। তাই শস্যশ্যামলা সবুজ নির্মল বিশুদ্ধ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে থিমের মাধ্যমে।

হাতিবাগান সর্বজনীন

Hatibagan sarbojanin হাতিবাগান মোড়ে থেকে চলুন খান্নার দিকে। পথেই পড়বে হাতিবাগান সর্বজনীন। ৮৫তম বর্ষে হাতিবাগান সর্বজনীন সাজছে পুরোনো দিনের চালচিত্রে। ঝলমলে চালির পাঁচালি। মণ্ডপ সাবেকি রাজবাড়ি। কিন্তু বাকিটা ডিজিটাল। দুর্গার ত্রিনয়নে রয়েছে হাজার মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। দু’ হাত জোড়া করে প্রণাম করলেই বাজিমাত। মুহূর্তের মধ্যে উঠে যাবে ছবি। আপলোড হয়ে যাবে সোশাল মিডিয়ায়।  

নলিন সরকার স্ট্রিট

nalin sarkar st.
নলিন সরকার স্ট্রিটের প্রতিমা।

মানুষের কর্মই মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আনে, আবার খ্যাতির শিখরেও পৌঁছে দেয়। কর্মহীন জন্ম তাই বৃথা। সে কথাই মণ্ডপের আনাচেকানাচে সাজিয়ে তুলেছে নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন। ৮৭তম বর্ষে এদের থিম ‘কর্মই ধর্ম’। গোটা মণ্ডপে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাচীন থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত চলে আসা চিরাচরিত নানান যন্ত্রপাতি। থিমটি ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন মডেল। শ্যামবাজারের দিকে যেতে খান্না সিনেমা বাসস্টপে নেমেই পেন্টালুনসের উলটো দিকের গলির ভেতরে মণ্ডপ।

হাতিবাগান নবীনপল্লি

হাতিবাগান নবীনপল্লীর থিম ‘লাইফলাইন’। নবীনপল্লীর বার্তা, ব্যাধি তা সে যেমনই হোক না কেন জীবনকে ঊষর করে তোলে। ক্রমশ চলমান জীবন হয়ে যায় স্থবির। মহিষাসুররূপী মধুমেহ, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, কিডনির অসুখ, সেরিব্রাল স্ট্রোক, আর সর্বোপরি ক্যানসার আজ মানুষের জীবনে অসুরের মতো। প্রাণ আর জীবনীশক্তি এই সব রোগাসুরের পদানত। কিন্তু এখান থেকেও যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। সেই লড়াইয়ে জীবনরেখার সন্ধান দিতেই অসুখরূপী অসুরকে পরাস্ত করতে হাতে লাইফলাইন তুলে দেবে হাতিবাগান নবীনপল্লী। সেখানে দেবী দুর্গা বরাভয় দিচ্ছেন, তুলে দিচ্ছেন জীবনরেখার সুলুক সন্ধান। হাতিবাগান কেএফসির উলটো দিকে গলির ভেতর মণ্ডপ নবীনপল্লীর।

সিকদারবাগান

সিকদারবাগানের পুজোর এ বার ১০৭ বছর। শহরের বহু সর্বজনীন পুজোর মতো এদেরও ভাবনা আবর্তিত হয়েছে জলকে ঘিরে। বিশ্ব জুড়ে আজ চরম জলসংকট। তার একটা কারণ  মানুষের অসচেতনতা। দিনের পর দিন ট্যাপ কল খুলে রাখা, যথেচ্ছ ভাবে জলের অপচয়, জলের অপব্যবহার এই জলসংকটের জন্য দায়ী। এ নিয়ে বার্তা দিতে দুর্গোৎসবের মঞ্চকেই কাজে লাগিয়েছে সিকদারবাগান। জলের অপচয় রুখতে তাদের বার্তা ‘যত্নে রাখ রত্ন পাবে’। অর্থাৎ ‘জল বাঁচাও। অপচয় বন্ধ করো। তাতে রক্ষা পাবে প্রাণ। বাঁচবে প্রজন্ম।’ থিম অনুযায়ী প্রতিমা। শ্যামবাজার থেকে হাতিবাগানের দিকে যেতে টাউন স্কুল বাসস্টপে নেমে বাঁ হাতে গলির ভেতর মণ্ডপ দেখা যায়।

মোহনবাগান বারোয়ারি

১০৩ বছরের এই পুজোয় যথারীতি সাবেক প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জায় সাবেকিয়ানা। ওড়িশার পিপলির হাতের কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। অষ্টমীতে কুমারীপুজো। সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং পাড়ার কচিদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার যাওয়ার পথে ডান হাতে গলির ভেতর পুজো।

টালা বারোয়ারি               

নেতাজির স্মৃতি বুকে নিয়ে ৯৯ বছরে পড়ল ‘টালা বারোয়ারি’। এ বারে তাদের নিবেদন ‘সোনায় মোড়া ৯৯’। এরা উপস্থাপন করছে একটি হারিয়ে যেতে বসা শিল্পকে। এই হস্তশিল্প এক ধরনের ঘাসের।  এই ঘাসকে বলা হয় গোল্ডেন গ্রাস অর্থাৎ স্বর্ণালী ঘাস। কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে পাওয়া যায় এই ঘাস, যা ঘিরে স্বপ্ন দেখে হাজার হাজার পরিবার। তাঁদের বেঁচে থাকার রসদ এই ঘাসের তৈরি বিভিন্ন হস্তকলা। সেই ধুঁকতে থাকা শিল্পের স্বর্ণালী আভাতেই সেজে উঠেছে গোটা মণ্ডপ। স্বর্ণালী ঘাসের শিল্পী এবং শিল্পকলাকে কুর্নিশ জানিয়ে এ বছরের নিবেদন ‘সোনায় মোড়া ৯৯’। ডানলপের দিকে যেতে টালা পোস্ট অফিস বাসস্টপের ডান দিকে এই পুজো।

টালা পার্ক প্রত্যয়

৯৪তম বর্ষে টালা পার্ক প্রত্যয়-এর নিবেদন ‘কল্পলোক’ – সমাজজীবনের বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা, গল্প তুলে ধরা হয়েছে। দেবী দুর্গাকেও ভাবা হয়েছে কল্পনার জগতে। আঁধার-আলো পরিবেশে কল্পনা করলে তবেই পাওয়া যাবে দেবীকে। থিমের সঙ্গে মানানসই প্রতিমা। টালা পার্কের কাছে মণ্ডপ।

ছবি তুলেছেন রাজীব বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *