পুজো পরিক্রমা ২০১৮ : দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ শহরতলি : ভ্রমণ অনলাইনের বাছাই

chetla agrani

দুর্গাপুজো এখন মধ্যগগনে। কারণ আজ বুধবার মহাষ্টমী। আজ বেশির ভাগ বাঙালিই সকালের দিকটা ব্যস্ত রয়েছেন পূজা-অঞ্জলি নিয়ে। তার পর মধ্যাহ্নভোজ সেরে একটু বিকেলের দিকে বেরিয়ে পড়বেন ঠাকুর দর্শনে। ভ্রমণ  অনলাইন আজ নিয়ে যাচ্ছে ফের দক্ষিণে। তবে সেখান থেকে চলে যাবে দক্ষিণ শহরতলিতে – চেতলা, নিউ আলিপুর, বেহালা, হরিদেবপুর, গড়িয়া হয়ে পাটুলিতে শেষ হচ্ছে এই পরিক্রমা।

চেতলা অগ্রণী

রাসবিহারী মোড় থেকে পশ্চিমে চলুন। চেতলা ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে যান চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপে। এদের এ বারের ভাবনা ‘ইয়ে দুনিয়া দর্শন কা মেলা’ যা ফুটে উঠছে ‘বিসর্জন’ নাম নিয়ে। মহালয়ার দিন চেতলা অগ্রণীর প্রতিমার চক্ষুদান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

suruchi sangha
সুরুচি সংঘ। ছবি রাজীব বসু।
সুরুচি সংঘ

চেতলা অগ্রণী থেকে দুর্গাপুর ব্রিজ হয়ে চলে আসুন নিউ আলিপুর পেট্রল পাম্পের কাছে। ৬৫তম বর্ষে সুরুচি সংঘের থিম মা ও মাটি। মাটির কাজ দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। এই পুজোর থিম সং রচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গানের প্রথম লাইন ‘জয় মা জয় দুর্গা’। পুজোর শ্রেষ্ঠ থিম সং হিসাবে রাজ্য সরকারের পুরস্কার পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গান।

বেহালা

থিমপুজোর জন্মভূমি বেহালা। এক সময়ে কলকাতার অন্দর থেকে লোকে বেহালা ছুটে যেত থিমের ঠাকুর দেখতে। এখনও থিমপুজোর প্রতিযোগিতায় একেবারে সামনের সারিতে বেহালা। সুরচি সংঘ দেখে তারাতলা হয়ে চলুন বেহালায়।

বেহালা ক্লাব

বেহালা থানার বিপরীতে হরিসভা ময়দানে মণ্ডপ। ইংরাজি, হিন্দির চাপে বাংলা ভাষা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ক্রমেই অবহেলিত হচ্ছে। সেই বাংলা ভাষাকে সঙ্গী করে প্রাক প্ল্যটিনাম জুবিলি বর্ষে বেহালা ক্লাব তাদের মণ্ডপভাবনায় রেখেছে ছোটোদের হাতেখড়ি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত অসংখ্য স্লেট, যাতে লেখা রয়েছে বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর।

বেহালা ফ্রেন্ডস ক্লাব

বেহালা ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়বাহাদুর রোড ধরে ইলোরা সিনেমার নিকটেই পেয়ে যাবেন মণ্ডপ। “মা কী তোর একার রে পাগল!” বহু কাল আগে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কথাটা বলেছিলেন। মা কারওর একার নয়, মা সকলের। বেহালা ফ্রেন্ডসের ২০১৮-এর মণ্ডপভাবনায় এমনই মায়ের আরাধনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন পুজো পরিক্রমা ২০১৮ : পূর্ব কলকাতা ও শহরতলি : খবর অনলাইনের বাছাই

বেহালা দেবদারু ফটক

বেহালার ১৪ নং বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে শিশু উদ্যান পার্কে। “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” — সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘হে মহাজীবন’ কবিতার মূল বিষয়বস্তুকে এ বারের মণ্ডপভাবনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বড়িশা ক্লাব

সখের বাজার মোড় থেকে বাঁ দিকে, জেমস লং সরণি ক্রসিং-এর কাছে। এদের এ বছরের পুজোর থিম ‘মায়ের ঋণ’। সন্তান যতই মাকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিক না কেন, মা কিন্তু সব সময়েই তার সন্তানকে আগলে রাখে। মায়ের ঋণ যে কখনও শোধ করা যায় না, সেটাই বোঝানো হয়েছে এই থিমে।

barisha sarbojanin
বড়িশা সর্বজনীন। নিজস্ব চিত্র।
বড়িশা সর্বজনীন

সখেরবাজার মোড় থেকে কেকে রায়চৌধুরী রোড ধরে দ্বাদশ মন্দিরের কাছেই পাওয়া যাবে আন্দামানকে। প্রকৃতি-মানব আন্দামানের জারোয়াদের জীবনকাহিনি, তাদের এক টুকরো সংস্কৃতিকে এ বারের থিম-ভাবনায় স্থান দিয়েছে বড়িশা সর্বজনীনের পুজো কমিটি।

barisha youth club
বড়িশা ইউথ ক্লাব। ছবি পাপিয়া মিত্র।
বড়িশা ইউথ ক্লাব

সখেরবাজার মোড় থেকে ডান দিকে গেলে দত্তের মাঠ ছাড়িয়ে দক্ষিণ বেহালা রোডে ইউথ ক্লাবের মণ্ডপ। এ বারের পুজোর থিমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘অন্নপূর্ণার রান্নাঘর’। মণ্ডপে প্রবেশ করলে দেখা যাবে একটা বিশালাকার উনুন, যাতে বিরাট আকৃতির একটা হাঁড়ি। এ ছাড়াও মণ্ডপের চারি দিকে তাকালেই দেখা যাবে ছোটো-বড়ো নানা রকমের কাঠের হাতা, খুন্তি, ডালকাঁটা ইত্যাদি।

বড়িশা তপোবন

সখের বাজার ছাড়িয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে চলে আসুন শীলপাড়ায়। বাঁ দিকে মণ্ডপ। চণ্ডীমঙ্গল ও মনসামঙ্গলের কাহিনি পটচিত্রে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ভাবেই প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই শিল্পকলাকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে তপোবন।

হরিদেবপুর

বেহালা-বড়িশা অঞ্চলের ঠাকুর দেখে সন্তোষ রায় রোড ধরে ধারাপাড়া হয়ে চলে আসুন মহাত্মা গান্ধী রোডে। ডান দিকে ঘুরে চলুন হরিদেবপুর।

হরিদেবপুর অজেয় সংহতি

এদের এ বছরের থিম খোলা হাওয়া। বারান্দার অলিন্দে বইছে, যে হাওয়া মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বিশ্বের সব দূষণ মুছে দিক এই খোলা হাওয়া, এই ভাবনা থেকেই এই থিম।

haridevpur 41 palli
হরিদেবপুর ৪১ পল্লি।ছবি রাজীব বসু।
হরিদেবপুর ৪১ পল্লি

অজেয় সংহতি দেখে করুণাময়ী মোড়ের দিকে আসুন। ডান দিকে ৪১ পল্লির মণ্ডপ। ৬১তম বর্ষে এদের থিম ‘সৃষ্টির তরণীতে আমি’। যার সৃষ্টি আছে, তার ধ্বংস আছে। আবার ধ্বংস হলেই নতুন করে সৃষ্টি হবে। তাই ধ্বংসের ভয় না পেয়ে সকলে হাতে হাত মিলিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করুন।

গড়িয়ার পথে

পশ্চিম পুটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতি

করুণাময়ী সেতুর আগে ডান দিকের রাস্তা ধরে চলে আসুন এদের মণ্ডপে। এ বছরে এদের থিম ‘ছায়াছবি’। ৬৪তম বর্ষে এই থিমের মাধ্যমে এরা বার্তা দিতে চায় – ‘আদম ক্ষুধায় লাগাম টানো, দাও উমাকে সম্মান’। গণধর্ষিতা উমা কী ভাবে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে চলে সেই কাহিনি শোনানো হয়েছে এখানে।

naktala udayan sangha
নাকতলা উদয়ন সংঘ। ছবি রাজীব বসু।
নাকতলা উদয়ন সংঘ

মুর অ্যাভেনিউ, নেতাজি সুভাষ রোড ধরে চলে আসুন নাকতলায়। এ বারের পূজার থিম ‘সময়কে ধরে রাখা’। শুধু সময় নয়, তার সঙ্গে প্রকৃতির যে অনবরত বদল হচ্ছে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। মণ্ডপের ভেতরে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দোতলা বাড়ি। মাঝখানে প্রতিমার মঞ্চ। সেখানে প্রতিমা বসে আছেন মানুষের কোলে। মানুষের মুখে মুখোশ। মঞ্চ ঘঁড়ির কাঁটার মতো বদলে যাচ্ছে। এবং দর্শনার্থীরাও দেখছেন ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রতিমার স্থান বদল হচ্ছে।

গড়িয়া-পাটুলি

চলে আসুন গড়িয়া মোড়ের দিকে। গড়িয়া অঞ্চলে কানুনগো পার্ক, শ্রীরামপুর ক্লাব, মিলন পার্ক ইত্যাদি দেখে চলে আসুন পাটুলি কানেক্টরে।

কেন্দুয়া শান্তি সংঘ

এ বছরে এদের থিম ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’। এখানে মা দুর্গা সপরিবার ট্রাকবাহনে। মণ্ডপের কাজে অভিনবত্ব আছে।

পাটুলি সর্বজনীন

বাইপাস মোড়ের দিকে আসুন। বাঁ দিকের রাস্তায় কিছুটা ভিতরে পাটুলি সর্বজনীনের পুজো। এদের থিম ‘রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে’। উন্নয়নের প্রতীক হিসাবে মণ্ডপে রাখা হয়েছে ঢালাই মেশিন।

বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি সর্বজনীন

বাইপাস মোড়ের দিকে আরও এগিয়ে চলুন। ডান দিকে পাটুলির মাঠে এদের পুজো। এই পুজোর থিম যা-ই হোক, পুজোর পরিবেশই এর ইউএসপি। খোলা মাঠে মেলা, আড্ডা, গানের আসর, এ সব নিয়ে জমজমাট এই পুজো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *