তাজপু্রের বালুকাবেলায়

debasree nandi
দেবশ্রী নন্দী

ঘুরে এলাম তাজপুর। হঠাৎই।

আসলে আমি ও আমার কর্তা দু’জনেই ভ্রমণপিপাসু। বেশি দিন নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখতে পারি না। তাই এক শনিবার ঠিক করলাম এক দিনের জন্য ঘুরে আসব। সমুদ্রপাড়ে কোথাও। কিন্তু কোথায়? প্রথমে ভাবলাম দিঘা। পরে ভাবলাম দিঘা তো অনেক বার ঘোরা। অন্য কোথাও গেলে কেমন হয়? তখন হঠাৎ মনে হল তাজপুরের কথা। নাম শুনেছি কিন্তু যাইনি কখনও। ব্যস, বেড়িয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে।

ভোর ৬টায় যাত্রা শুরু। দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে বম্বে রোড ধরলাম। কিন্তু যা! ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল যে! কী মুশকিল। বম্বে রোডে ট্রাফিক বেশ বেশি। তার ওপর বৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াল। যা-ই হোক, বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে আমরা পৌঁছোলাম আজাদ হিন্দ ধাবায়। ওখানে জলখাবার সারলাম। তখন ঝমাঝম বৃষ্টি নেমে গিয়েছে। কী আর করা যাবে। এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। তাই বৃষ্টি মাথায় করেই বেরিয়ে পড়লাম। কোলাঘাটে চা খেয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম তাজপুর।

বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই হোটেলে পৌঁছে চটপট জামাকাপড় বদলে দুপুরের খাওয়ার অর্ডার দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম বিচে। আহা! কী নির্জন আর মনোরম বিচ এই তাজপুর। কত দিন বাদে সমুদ্রে এলাম! মনটা বেশ ভালো লাগল। ঝাউবন এই সৈকতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আমার মেয়ে আর ধৈর্য রাখতে না পেরে নেমে পড়ল স্নান করতে। আমার কর্তাও নামল আমাকে জিনিসপত্র দেখার দায়িত্ব দিয়ে। সৈকতেই বেশ কয়েকটা ছোটো ছোটো চা আর স্ন্যাক্সের দোকান নজরে পড়ল। ওখানে চা আর ডিমভাজা নিয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে যে কী ভাল লাগছিল কী বলব।

when rain comesকিন্তু আবার হঠাৎ কোথা থেকে যেন কালো মেঘ জমাট বেঁধে নামিয়ে দিল বৃষ্টি, তার সঙ্গে প্রবল ঝড়। ঝোপড়ি চায়ের দোকানই তখন আমাদের আশ্রয়। সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠল। সমুদ্রে বৃষ্টি দেখার অনুভূতি কিন্তু দারুণ। কলকাতায় তো প্রায়ই বৃষ্টি দেখি কিন্তু সমুদ্র বা পাহাড়ে সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগে।

আরও পড়ুন : চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে উঠে আসা দ্বীপে এক রাত 

অপেক্ষা করছিলাম কখন বৃষ্টি থামবে। খিদে পেয়ে গিয়েছিল প্রচণ্ড, কখন যে হোটেলে ফিরতে পারব!। বেশ কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামল। হোটেলে ফিরে এলাম। হোটেলের খাওয়া খুব ভালো, সুস্বাদু। ম্যানেজারের আতিথেয়তাও তারিফ করার মতো।

যা-ই হোক, হাতে সময় কম, তাই যতটা পারলাম ঘোরার চেষ্টা করলাম। বিকেলে সমুদ্রতট ধরে সোজা হাঁটলাম। ও-দিকের বিচটা পরিষ্কার। তাই বেশ ভালো লাগল। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হল কিন্তু বৃষ্টির বিরাম নেই। খেপে খেপে পড়েই যাচ্ছিল। একটু কমে আবার একটু বাড়ে। এই ভাবেই চলল বাকি দিনটা। বেশ কিছুক্ষণ সৈকত-ভ্রমণের পর বৃষ্টির ইঙ্গিত অনুভব করে অগত্যা হোটেলমুখো হতেই হল।

পরের দিন সকালে জলখাবার খেয়ে আমরা যাত্রা করলাম বাড়ির দিকে, সঞ্চিত স্মৃতি বুকে নিয়ে।

আরও পড়ুন : পুজোয় অদূর ভ্রমণ / ড্যাঞ্চিবাবুদের পশ্চিমে 

কী ভাবে যাবেন

(১) দিঘাগামী ট্রেনে গেলে নামতে হবে রামনগর স্টেশনে। স্টেশন থেকে তাজপুর সৈকতে যাওয়ার নানা ধরনের যান পাওয়া যায়। হোটেল আগে থেকে সংরক্ষণ করা থাকলে এবং ওদের বলে রাখলে স্টেশন থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।

(২) দিঘাগামী বাসে গেলে কন্ডাক্টরকে বলে রাখলে চাউলখোলার পরে তাজপুর মোড়ে নামিয়ে দেবেন কন্ডাক্টর। ওখান থেকে চার কিমি তাজপুর সৈকত। ভ্যানগাড়ি, ভ্যানো, টোটো ইত্যাদি পাওয়া যায়। তা ছাড়া হোটেলকে বলে রাখলে তারা ব্যবস্থা করে।

(৩) নিজেদের গাড়িতে গেলে জাতীয় সড়ক ৬ ধরে মেচেদা। তার পর বাঁ দিকে হলদিয়াগামী জাতীয় সড়ক ধরে নন্দকুমার। সেখান থেকে ডান দিকে দিঘার রাস্তায়। কাঁথি পেরিয়ে চাউলখোলা ছাড়িয়ে তাজপুর মোড় থেকে বাঁ দিকে।

কোথায় থাকবেন

তাজপুরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটা বেসরকারি হোটেল আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল তাজ ভিলা (৮০০১৮৭৪৯৪),
হোটেল শ্রেয়সী (৮৩৪৬৯৭৪৩৫, ৯৯৩২৪৭৩৪৩৭), জঙ্গল ক্যাম্প রিসর্ট (০৯৮৩১১৬৭৫৩৭) প্রভৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *