ঘরে বসে মানসভ্রমণ: তিন দিকে সাগর দিয়ে ঘেরা মুরুদেশ্বর

murdeswar

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: এক দম হতাশ হবেন না, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বেন না। অচিরেই আমরা বিপন্মুক্ত হব। তত দিন আমরা ঘরবন্দি দশা উপভোগ করি। দৈনন্দিন রুটিন কাজের পাশাপাশি নানা সৃজনশীল কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখি। আর তার সঙ্গে করি মানসভ্রমণ। মানসভ্রমণের সুলুকসন্ধান তো দিয়েই চলেছে ভ্রমণ অনলাইন। বিশেষ করে, যে সব জায়গায় সাধারণত বাঙালি ট্যুরিস্টদের পা পড়ে না সে সব জায়গার ঠিকানা। আর এই ঠিকানাই যে আপনার ভবিষ্যৎ-ভ্রমণের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই।

আজ চলুন আরব সাগরের পাড়ে শৈবতীর্থ মুরদেশ্বর, তিন দিকে সাগর দিয়ে ঘেরা। উপকূল কর্নাটক বেড়াতে গেলে একটা দিন মুরদেশ্বর কাটাতেই পারেন। উপকূল ধরে জাতীয় সড়ক ৬৬ বরাবর মেঙ্গালুরু থেকে গোকর্ণ গেলে পথে পড়ে মুরদেশ্বর। এখানে এলে মনে হবে, অন্তত একটা দিন কাটিয়ে যাই।

কী দেখবেন

(১) মুরদেশ্বর শিবমন্দির – সমুদ্রের পাড়ে ২০টি তলা ও ২৩৭.৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট রাজা গোপুরম এবং মুরদেশ্বর শিবমন্দির। কাণ্ডুকা পাহাড়ের শীর্ষে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে। দেবতা শ্রীমৃদেসা লিঙ্গ, যাঁকে মুরদেশ্বরও বলা হয়। গর্ভগৃহ অন্ধকার। লিঙ্গ ভূগর্ভের ২ ফুট নীচে। গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারের মুখে দাঁড়িয়ে পুরোহিতদের দেখানো প্রদীপের আলোয় লিঙ্গ দর্শন করেন ভক্তরা। গর্ভগৃহের ভেতরে কোনো ভক্ত ঢুকতে পারেন না। পবিত্র পাহাড় কাণ্ডুকাকে ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। একে শঙ্খতীর্থও বলা হয়ে থাকে। কথিত আছে, এখানেই শিবের দেওয়া শঙ্খের জলে স্নান করে পাপমুক্ত হন বিষ্ণু আর সেই পবিত্র জলের স্পর্শে কাণ্ডুকা পাহাড় হয় শঙ্খতীর্থ। পাহাড়ের নীচে রয়েছে রামেশ্বর লিঙ্গ, যেখানে ভক্তরা পূজা দিতে পারেন। কাছেই শ্রীঅক্ষয়গুণের মূর্তি। তার পাশেই তৈরি হয়েছে শনেশ্বর মন্দির

(২) বিশাল শিবমূর্তি – সমুদ্রের ধারেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবমূর্তি, উচ্চতা ১২৩ ফুট। বৃহত্তম শিবমূর্তি রয়েছে নেপালে, কৈলাশনাথ মহাদেব। মুরদেশ্বরের শিবমূর্তিটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়।

(৩) মন্দির সংলগ্ন পার্ক – সুন্দর চর্চিত বাগান, সাজানো হয়েছে আরও অসংখ্য মূর্তি ও স্থাপত্য দিয়ে। স্থাপত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীকৃষ্ণের মুখে অর্জুনের গীতার উপদেশ শোনা, রাবণ সমীপে ছদ্মবেশী গণেশ, ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন ইত্যাদি। স্থাপত্যগুলো তৈরি হয়েছে পাহাড় কেটে।

(৪) জোড়া সৈকত – মুরুদেশ্বরকে শুধু তীর্থস্থান ভাবলে ভুল হবে। মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে জোড়া সৈকত, কাণ্ডুকা পাহাড়ের দু’ পাশে। ঝাউয়ে ছাওয়া সোনালি সাগরবেলা আপনার মন ভরিয়ে দেবে। রয়েছে নানা রকম সামুদ্রিক ক্রীড়ার ব্যবস্থা।                 

গোটা জায়গাটাকে ভালো ভাবে দেখতে হলে গোপুরমের একেবারে শীর্ষতলায় চলে যান। লিফ্‌টের ব্যবস্থা আছে।

murdeswar gopuram
মুরদেশ্বরের রাজা গোপুরম।

কী ভাবে যাবেন

কোঙ্কন রেলপথের মুরুদেশ্বর স্টেশন, মুম্বই থেকে শুরু করে তিরুঅনন্তপুরম, পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত। ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে যেতে হলে মুম্বই, মেঙ্গালুরু (ম্যাঙ্গালোর) বা মাড়গাঁওতে (গোয়া) ট্রেন বদল করে আসতে হবে।

ম্যাঙ্গালোর জংশন থেকে সুবিধাজনক ট্রেন – (১) ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল-মাড়গাঁও প্যাসেঞ্জার – ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল ছাড়ে ভোর সাড়ে ৫টায়, মুরুদেশ্বর পৌঁছোয় সকাল ৯.০৭ মিনিটে; (২) ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল-মাড়গাঁও ডিএমইউ – ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল ছাড়ে বিকেল পৌনে ৩টেয়, মুরুদেশ্বর পৌঁছোয় সন্ধে সাড়ে ৬টায়; (৩) মৎস্যগন্ধা এক্সপ্রেস – ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল ছাড়ে দুপুর ২,৩৫ মিনিটে, মুরুদেশ্বর পৌঁছোয় বিকেল ৫.৩৮ মিনিটে।

মাড়গাঁও থেকে সুবিধাজনক ট্রেন – (১) মাড়গাঁও-ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল ডিএমইউ – মাড়গাঁও ছাড়ে ভোর ৫টায়, মুরুদেশ্বর পৌঁছোয় সকাল ৭.৩১ মিনিটে, (২) মাড়গাঁও-ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল – মাড়গাঁও ছাড়ে দুপুর ১টায়, মুরুদেশ্বর পৌঁছোয় বিকেল ৪.৩৭ মিনিটে।

আরও পড়ুন: ঘরে বসে মানসভ্রমণ: মমতাজের বুরহানপুর

কলকাতা থেকে মুরুদেশ্বর যেতে হলে মাড়গাঁওয়ে ট্রেন বদল করে যাওয়াই ভালো। কলকাতা থেকে মাড়গাঁও যাওয়ার ট্রেম অমরাবতী এক্সপ্রেস – হাওড়া ছাড়ে (সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি) রাতে সাড়ে ১১টায়, মাড়গাঁও পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১.৫৫ মিনিটে।

মাড়গাঁও থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন মুরুদেশ্বর, দূরত্ব ১৮৯ কিমি।             

কোথায় থাকবেন

মুরুদেশ্বরে থাকার জন্য বেসরকারি হোটেল, রিসর্টই ভরসা। নানা দামের, নানা মানের হোটেল আছে। তবে একেবারে সমুদ্রের ধারে রয়েছে নবীন বিচ রিসর্ট। অনলাইন বুকিং https://www.naveenhotels.com/Naveen-Beach-Resort/  

জেনে রাখুন

ট্রেনের বিশদ তথ্যের জন্য দেখুন erail.in

কলকাতা থেকে উপকূল কর্নাটক ভ্রমণের পরিকল্পনা করে সেই পরিকল্পনায় অবশ্যই রাখুন মুরুদেশ্বর। কলকাতা থেকে গোয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে অন্তত একটা দিনের জন্য মুরুদেশ্বর ঘুরে আসতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *