চলুন বেরিয়ে পড়ি: কর্নাটক ২

Birupaksha temple, Hampi

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: পর্যটন সম্পদে রীতিমতো সমৃদ্ধ কর্নাটক।  ইতিহাস, স্থাপত্য, জঙ্গল, সমুদ্র, পাহাড়  – কী নেই এই রাজ্যে। সাধে এই রাজ্যের পর্যটনের স্লোগান ‘এক রাজ্য, অনেক বিশ্ব’! কিন্তু বাঙালি এই রাজ্যে বেঙ্গালুরু-মায়শুরু (মহীশুর) কেন্দ্রিক ঘোরাঘুরি করে চলে আসে। ভ্রমণ অনলাইন আপনাদের জন্য সাজিয়ে দিল কর্নাটকের তিনটি ভ্রমণ-ছক। আজ প্রকাশিত হল দ্বিতীয় ভ্রমণ ছকটি।

ভ্রমণ-ছক ২: উত্তর কর্নাটক

প্রথম দিন – হাম্পি পৌঁছোন। থাকুন হাম্পিতে।

হাম্পির সব চেয়ে কাছের স্টেশন হোসাপেটে জংশন (হসপেট)। কলকাতা থেকে সরাসরি চলুন। হাওড়া থেকে প্রতি সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ছাড়ে অমরাবতী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি তৃতীয় দিন সকাল ৬:১৯-এ হোসাপেটে জংশনে পৌঁছোয়।  বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, সেকেন্দরাবাদ (হায়দরাবাদ) থেকে সরাসরি ট্রেনে হোসাপেটে আসা যায়। এখান থেকে হাম্পি ১৩ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে নিন। দেশের অন্য কোনো জায়গা থেকে এলে ট্রেনে বা বিমানে বেঙ্গালুরু এসে সেখান থেকে হোসাপেটে আসুন।  বেঙ্গালুরু থেকে গাড়িতে বা কর্নাটক রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসেও হাম্পি যাওয়া যেতে পারে। বেঙ্গালুরু থেকে হাম্পির দূরত্ব ৩৪৩ কিমি।

দ্বিতীয় ও  তৃতীয় দিন – থাকুন হাম্পিতে।

chariyot in bitthal temple

বিঠ্‌ঠল মন্দিরে পাথরের রথ।

হাম্পিতে কী দেখবেন 

(১) বিরুপাক্ষ মন্দির ঘিরে – তুঙ্গভদ্রা তীরে বিরুপাক্ষ মন্দির দেখে হেমকূট পাহাড়, কদলেই কলু গণেশ, সসিভে কলু গণেশ, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, বড়ভি লিঙ্গ ও লক্ষ্মীনরসিংহ।

(২) অচ্যুতরায় মন্দিরের পথে – বিরুপাক্ষ মন্দিরের উলটো দিকে মাতঙ্গ পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল নন্দীমূর্তি দেখে তুঙ্গভদ্রার পাড় ধরে চলুন অচ্যুতরায় মন্দিরের দিকে। পথে কোদণ্ডরাম মন্দির।

আরও পড়ুন: চলুন বেরিয়ে পড়ি: কর্নাটক ১

(৩) বিঠ্‌ঠল মন্দিরের পথে – অচ্যুতরায় মন্দির দেখে তুঙ্গভদ্রার পাড় ধরে এগিয়ে একে একে দেখুন জৈন মন্দির, সুগ্রীব গুহা, কিংস ব্যাল্যান্স, অসমাপ্ত দরজা, বিষ্ণু মন্দির, পৌঁছে যান বিঠ্‌ঠল মন্দিরে। নিঃসন্দেহে হাম্পির সর্বশ্রেষ্ঠ মন্দির। এখানে রয়েছে পাথরের রথ। চাকাগুলো জোড়া, সারা গায়ে ভাস্কর্য।

Lotus Mahal

লোটাস মহল।

(৪) রাজবাড়ি অঞ্চল – বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আবাসস্থল। এখানে চোখে পড়বে নানান নিদর্শন। কুইন্স বাথ, চন্দ্রশেখর মন্দির, অক্টাগোনাল ট্যাঙ্ক, সরস্বতী মন্দির, ধাপওয়ালা পুষ্করিণী, টাঁকশাল, দরবার হল, দণ্ডনায়ক এনক্লোজার, মহানবমী ডিব্বা, লোটাস মহল (হাম্পির সব থেকে শ্রেষ্ঠ প্রত্ন নিদর্শন), হাতিশালা, রাজপ্রাসাদ, থ্রোন প্ল্যাটফর্ম, ওয়াটার টাওয়ার ইত্যাদি। রয়েছে হাম্পির আরও এক নাম করা মন্দির হাজাররামা মন্দির।

(৫) পট্টভিরমা মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম

(৬) ভীমের ফটক ও গণগিট্টি জৈন মন্দির হয়ে মাল্যবন্ত রঘুনাথ মন্দির – মাল্যবন্ত পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত নয়নাভিরাম।

(৭) প্রাচীন কিষ্কিন্ধ্যা – হাম্পির পৌরাণিক খ্যাতি রামায়ণের জন্য। তুঙ্গভদ্রা নদীর ওপারে আনেগুন্দি, প্রাচীন কিষ্কিন্ধ্যা নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে অঞ্জনা পাহাড়, পম্পা সরোবর, শবরী গুহা। কোরাকল বা ঝুড়ি নৌকায় নদী পেরিয়ে হাম্পি থেকে আনেগুন্দি যেতে পারেন। ঘুরপথে গাড়ির রাস্তাও রয়েছে।

(৮) তুঙ্গভদ্রা ড্যাম – কোনো এক বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার জন্য চলুন হসপেটের তুঙ্গভদ্রা ড্যামে।

চতুর্থ দিন – হাম্পি থেকে চলুন বিজাপুর, ২১৫ কিমি। রাত্রিবাস বিজাপুর।

পঞ্চম দিন – আজও থাকুন বিজাপুরে।

বিজাপুরে কী দেখবেন

(১) গোল গুম্বজ – ভারতের বৃহত্তম এবং রোমের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ।

(২) ইব্রাহিম রৌজা মসজিদ – দক্ষিণের তাজমহল হিসেবে পরিচিত।

(৩) উপ্পালি বুর্জ – আশি ফুটের মিনার থেকে বিজাপুর শহর দৃশ্যমান।

এ ছাড়াও বিজাপুর শহর জুড়ে রয়েছে আরও কিছু নিদর্শন। যেমন, মালিক-এ-ময়দান, চাঁদ বাওড়ি, আসর মহল, গগন মহল, জামি মসজিদ, জোড় গুম্বজ, মালিকা জাহান বেগমের মসজিদ ইত্যাদি।

ষষ্ঠ দিন – বিজাপুর থেকে চলুন বাদামি ১১৫ কিমি। রাত্রিবাস বাদামি।

সপ্তম দিন – আজও থাকুন বাদামিতে।

Badami caveমালেগিট্টি পাহাড় থেকে বাদামির গুহা।

বাদামিতে কী দেখবেন

(১) গুহামন্দির – চারটে গুহা আর একটি দুর্গ নিয়ে গুহামন্দির। চারটে গুহার তিনটে ষষ্ঠ শতাব্দীর হিন্দু গুহা, চতুর্থটি ১০০ বছর পরের জৈন গুহা। গুহায় রয়েছে ফ্রেস্কো চিত্র। দু’নম্বর এবং তিন নম্বর গুহার মধ্যে বাদামি দুর্গ। মূল আকর্ষণ টিপুর কামান।

(২) অগস্ত্যতীর্থ বা ভূতনাথ লেক – গুহামন্দিরের পাহাড়ের পাদদেশে।

(৩) মহাকূটেশ্বর ও মালেগিট্টি – ভূতনাথ লেকের পাড়ে অনুচ্চ পাহাড়টিলায়।

(৪) প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম – ভূতনাথ লেকে যাওয়ার রাস্তার ধারে।

(৫) পাট্টাডকাল মন্দিরগুচ্ছ – বাদামি থেকে ২৯ কিমি দূরে বিশ্ব হেরিটেজ। ৭ থেকে ৯ শতকের তৈরি দশটি মন্দির। অন্যতম দু’টি শ্রেষ্ঠ মন্দির বিরুপাক্ষ ও মল্লিকার্জুন। সঙ্গমেশ্বর, গলগনাথ, জম্বুলিঙ্গ, কাদ্দি সিদ্ধেশ্বর ইত্যাদি মন্দির।

(৬) আইহোলের মন্দিররাজি – পাট্টাডকাল থেকে ১৭ কিমি। এখানে রয়েছে জৈন এবং দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যের ১২৫টি মন্দির। এখানে রয়েছে লাডখান মন্দির, সূর্যনারায়ণ মন্দির, গৌডর গুড়ি, চিক্কি গুড়ি মন্দির, দুর্গ গুড়ি মন্দির, হুচ্চিমল্লিগুড়ি ইত্যাদি।

durga mandir. Aiholeদুর্গ মন্দির, আইহোল।

অষ্টম দিন – আসুন ১০৪ কিমি দূরের হুব্বালি (হুবলি)। চলুন গডগ, ৪৭ কিমি। দেখুন ১৫ মিটার উঁচু গোপুরবিশিষ্ট বৈষ্ণব মন্দির, দুর্গে ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির, পিছে সরস্বতী নদী। রাত্রিবাস হুবলি।

নবম দিন – হুব্বালি থেকে ফেরার ট্রেন ধরুন। অমরাবতী এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র এবং রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন রাত সাড়ে দশটায়। তা ছাড়া দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গে ট্রেনপথে হুব্বালি যুক্ত। বিমানেও ঘরপানে ফিরতে পারেন।  

কী ভাবে ঘুরবেন

পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়ি করাই সব থেকে ভালো। তবে বাস পরিষেবাও পাবেন।

কোথায় থাকবেন

সব জায়গাতেই রয়েছে কর্নাটক উন্নয়ন নিগমের হোটেল। অনলাইন বুকিং https://kstdc.co/ । এ ছাড়াও রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন।

মনে রাখবেন

(১) ট্রেনের বিস্তারিত সময়সূচির জন্য দেখুন erail.in

(২) যদি সকালেই হাম্পি পৌঁছোতে পারেন তা হলে মোটামুটি সব কিছু দেখা সম্ভব। হাম্পি ঠিকঠাক দেখতে হলে কমপক্ষে তিনটে পুরো দিন লাগে। আর যদি  সন্ধ্যায় পৌঁছোন তা হলে প্রাচীন কিষ্কিন্ধ্যা বাদ দিতে পারেন।

(৩) হাম্পি ঘোরার জন্য স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে নেবেন। অচ্যুতরায় মন্দির দেখে বিঠ্‌ঠল মন্দিরে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করলে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। সুগ্রীব গুহা পর্যন্ত দেখে ফিরে আসুন। বিঠ্‌ঠল মন্দিরে যাওয়ার অন্য গাড়ি-পথ আছে। রাজবাড়ি অঞ্চলেও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি রেখে হেঁটে ঘুরতে হবে।

sunset from Malyawanta hillমাল্যবন্ত পাহাড়ে সূর্যাস্ত, হাম্পি।

(৪) মাল্যবন্ত পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত দেখবেন, আবার হসপেটে তুঙ্গাভদ্রা ড্যাম থেকেও সূর্যাস্ত দেখবেন। সুতরাং দু’টো ভ্রমণ এক দিনে রাখবেন না।

(৫) বাদামি থেকে হুবলি আসতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সুতরাং যে দিন হুবলি থেকে ঘরপানে রওনা হবেন, সে দিনই বাদামি থেকে হুবলি আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে গডগ বাদ দেবেন। চাইলে এক দিন হাম্পিতে বাড়িয়ে নেবেন। ঠকবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *