ঘুরে আসুন হস্তিনাপুরের এই মন্দিরে

Pandeshwar Mahadev Temple

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: আপনি কি একটু শহর থেকে শান্ত, নির্জন জায়গায় যেতে ভালোবাসেন? তাহলে যেতে পারেন দিল্লী থেকে কিছু দূরে হস্তিনাপুরের পাণ্ডেশ্বর মহাদেব মন্দিরে এবং সেটাও যেতে হবে একটু অসময়ে।

হস্তিনাপুর। নাম শুনলেই কী রকম একটা অনুভূতি হয় না? মনে পড়ে যায় মহাভারতের কথা। সত্যিই তা-ই। এই পাণ্ডেশ্বর মহাদেব মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেই মহাভারত। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা লোককাহিনি, যার সব ক’টিই মহাভারত-কেন্দ্রিক।

আরও পড়ুন: তাওয়াং-এর কাছে এক ছোট্ট স্বর্গ মাধুরী লেক

শোনা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে এই স্থানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন জ্যেষ্ঠ পাণ্ডবপুত্র যুধিষ্ঠির। যুদ্ধে যাতে তিনি জিততে পারেন তার জন্য মহাদেবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছিলেন। 

আবার অন্য এক কাহিনি অনুসারে, মহাভারতের বিস্মৃত নায়ক কর্ণ এই শিবলিঙ্গ দান করেছিলেন।  শোনা যায়, এই মন্দিরের পাশ দিয়ে গঙ্গা নদীর একটি ধারা বয়ে যেত এবং কর্ণ সেই নদীতে স্নান করে মন্দিরে পুজো দিতেন, তার পর গরিবদের সোনা বিলিয়ে দিতেন। দ্রৌপদীও নাকি এই নদীতে স্নান করে মন্দিরে পুজো দিতেন।

মন্দির সংস্কার

পরবর্তীকালে ১৭৯৮ সালে পরীক্ষিৎগড়ের রাজা নৈন সিংহ এই মন্দিরটি সংস্কার করেন। উত্তরপ্রদেশ রাজ্য পর্যটন বিভাগ এক দশক আগে এই মন্দিরটি পুনরুদ্ধার করেছেন। চারিদিকে জঙ্গল, সবুজ পাহাড়ের মাঝে এই মন্দির শান্তির জায়গা। মন্দিরটি হস্তিনাপুর জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত। 

meditation temple
ধ্যান মন্দির, জম্বুদ্বীপ।

স্থানীয় বিশ্বাস, এই মন্দির খুব জাগ্রত। এই মন্দিরকে বলা হয় ইচ্ছাপূরণের মন্দির। এখন মন্দিরের কাছে যে নদীখাতটি রয়েছে, তাকে বুড়ি গঙ্গা বলে।  এই খাতে রয়েছে দু’টি ঘাট –  কর্ণ ঘাট ও দ্রৌপদী ঘাট। প্রতি কার্তিকপূর্ণিমায় প্রচুর লোক এই ঘাটে স্নান করে মন্দিরে পুজো দেন।

প্রাচীন কুয়ো ও বটবৃক্ষ

এই মন্দির প্রাঙ্গণে একটি বহু প্রাচীন কুয়ো আছে। এই কুয়োর জল খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়। অনেক মানুষ এই পবিত্র জল খান, বা বাড়ি গিয়ে সারা বাড়িতে এই পবিত্র জল ছিটিয়ে বাড়ি শুদ্ধ করেন। শিবরাত্রির দিনেও এই জল তোলা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণেই রয়েছে একটি বটবৃক্ষ। সেই বৃক্ষও কয়েক হাজার বছরের পুরোনো বলে লোকের বিশ্বাস।   

প্রখ্যাত পুরাতত্ববিদ শ্রী লাল মহাশয় ১৯৫০ সালে এই মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে কিছু মৃৎশিল্পের নমুনা খুঁজে পান। কার্বন ডেটিং পদ্ধতি অনুসারে পরীক্ষা করে দেখা যায়, নমুনাগুলি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের।

কী ভাবে যাবেন

দিল্লি থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে হস্তিনাপুর, মেরঠ স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার। দিল্লি থেকে ট্রেনে মেরঠ এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। কিংবা দিল্লি থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন হস্তিনাপুরে। বা মেরঠ থেকে তাজ্য পরিবহণের বাসে এক -দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় হস্তিনাপুর। 

আর কী দেখবেন হস্তিনাপুরে 

হস্তিনাপুরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দু’টি বিষয় – মহাভারত এবং জৈনধর্ম। সুতরাং এখানকার সব দ্রষ্টব্যই এই দু’টি বিষয়কেন্দ্রিক।

কর্ণ ঘাট ও দ্রৌপদী ঘাট ছাড়াও পাণ্ডেশ্বর মহাদেব মন্দিরের কাছেই রয়েছে ‘বিদুর কুটির’, দুর্গাদেবী মন্দির এবং কর্ণ মন্দির।

 

ashtapada
অষ্টপদ।

হস্তিনাপুরকে জৈনধর্মের কাশী বলা হয়। জৈনধর্মের চব্বিশ তীর্থংকরের মধ্যে তিন জনের জন্ম এই হস্তিনাপুরে – ষোড়শ তীর্থংকর শ্রীশান্তিনাথ, সপ্তদশ তীর্থংকর শ্রী কুণ্ঠুনাথ এবং অষ্টাদশ তীর্থংকর শ্রীআড়নাথ।

হস্তিনাপুরের প্রধান আকর্ষণ ‘জম্বু দ্বীপ’, এই ‘জম্বু দ্বীপ’ চত্বরেই রয়েছে ১০১ ফুট উঁচু ‘সুমেরু পর্বত’, ‘তিন লোক রচনা’, ‘ধ্যান মন্দির’ এবং ‘কমল মন্দির’। এ ছাড়া রয়েছে বাবা দিগম্বর জৈন মন্দির, অষ্টপদ ইত্যাদি।

কোথায় থাকবেন

তা হলে দিল্লি থেকে সপ্তাহান্তিক ভ্রমণের জায়গা হতেই পারে হস্তিনাপুর। যাত্রীদের থাকার জন্য ‘জম্বুদ্বীপ’-এ ভালো ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও কাছাকাছি আরও ধর্মশালা আছে।           

 

       

 

   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *