সাত শতকের পাথুরে স্থাপত্য আর ভাস্কর্য নিয়ে অনন্য সৈকতশহর মহাবলিপুরম

rathas of mahabalipuram

ভ্রমণঅনলাইনডেস্ক: তামিলনাড়ুর সৈকতশহর মহাবলিপুরম বা মামাল্লাপুরমের সৌধগুলি ১৯৮৪ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। রথ, মণ্ডপ বা গুহামন্দির, কাঠামো মন্দির এবং পাথরে ব্যাস-রিলিফ সহ প্রায় ৪০টি দর্শনীয় স্থান আছে ‘সাত প্যাগোডার দেশে’। পৃথিবীর দীর্ঘতম গুহামন্দির এখানেই অবস্থিত। এবং এই গুহার মূর্তিগুলি পাথর কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ স্তম্ভই পহ্লব রাজাদের আমলে তৈরি। নির্মাণকাল আনুমানিক সপ্তম শতক। এই মহাবলিপুরম ছিল বন্দরনগরীও। এই সমুদ্রবন্দর থেকে বণিকেরা মধ্য এশিয়া যেতেন বাণিজ্যে। তা হলে চলুন, ঘুরে নেওয়া যাক মহাবলিপুরম।

রথমন্দির

পাথর কেটে তৈরি এই মন্দিরগুলির রথের আদল। তাই বলা হয় রথ। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল সাতের শতকে নরসিংহবর্মনের আমলে। তবে তাঁর মৃত্যুর পর নির্মাণকাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। এই রথগুলিকে বলা হয় পাণ্ডব রথ। এখানে মোট সাতটি রথমন্দির আছে, এর মধ্যে পাঁচটি রথ পঞ্চপাণ্ডবের নামে নামাঙ্কিত। যেমন ধর্মরাজ রথ, ভীম রথ, অর্জুন রথ, নকুল রথ ও সহদেব রথ। এবং বাকি রথদু’টির নাম দ্রৌপদী রথ এবং গণেশ রথ। প্রতিটি রথ মনোলিথিক অর্থাৎ এক একটি পাথর কেটে তৈরি। দ্রৌপদী রথ বাংলার চালাঘরের মত, অর্জুন রথ বৌদ্ধবিহারের আদলে তৈরি, ভীমরথ ত্রিতলিকা পিরামিডধর্মী ধর্মরাজ রথ আয়তাকার আর বৌদ্ধ চৈত্যের শৈলীতে নির্মিত নকুল ও সহদেব রথ। মন্দিরগুলি অসম্পূর্ণ, তাই পুজো হয় না।

মণ্ডপ তথা গুহামন্দির

mahishasuramardini mandap
মহিষাসুরমর্দিনী মণ্ডপ।

পাহাড়ে গুহা কেটে এই মন্দিরগুলি তৈরি করা হয়েছে। এখানে মোট ১১টি মন্দির আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বরাহ মণ্ডপ, কৃষ্ণ মণ্ডপ, গণেশ মণ্ডপ এবং মহিষাসুরমর্দিনী মণ্ডপ। ইতিহাসবিদদের মতে, এই মন্দিরগুলি মামাল্লা শৈলীতে তৈরি। বেশির ভাগই তৈরি হয়েছে সপ্তম শতকে, কিছু অষ্টম শতকেও তৈরি হয়েছে, যেমন আদিরণচণ্ড গুহা। এই গুহাগুলির মধ্যে কৃষ্ণ মণ্ডপ প্রাচীনতম, সুন্দরতম এবং বৃহত্তম। ইন্দ্রর রোষানল থেকে গোপ-গোপীদের রক্ষা করতে শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পাহাড় তোলার দৃশ্য রূপ পেয়েছে এই গুহায়। নানা পৌরাণিক আখ্যান মণ্ডিত বরাহ মণ্ডপ। বাকি গুহাগুলিও নানা ভাস্কর্যমণ্ডিত। পহ্লব ভাস্কর্যের শিল্পসুষমায় অনবদ্য মহিষাসুরমর্দিনী মণ্ডপ।

পাথরে ব্যাস-রিলিফ

খোলা আকাশের নীচে পৃথিবীর সব চেয়ে ব্যাস-রিলিফের কাজ অর্জুনের তপস্যা বা ভগীরথের তপস্যা মহাবলিপুরমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। এক পাহাড় কুঁদে এই ব্যাস-রিলিফ তৈরি হয় ৬৩০-৬৭০ খ্রিস্টাব্দে। আত্মীয় নিধনের পাপ থেকে বাঁচতে শিবকে তুষ্ট করে এক পায়ে বর প্রার্থনা করছেন অর্জুন, কিরাত-অর্জুনের যুদ্ধ, হস্তী পরিবারের কারিকুরি, ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন, শিবের জটা থেকে গঙ্গার অবতরণ, পঞ্চতন্ত্রের আখ্যান ইত্যাদি মূর্ত হয়েছে এই ব্যাস-রিলিফে।    

arjun's penance
অর্জুনের তপস্যা – ব্যাস-রিলিফ।

কাঠামো মন্দির

সমুদ্রসৈকতের সাতটি মন্দিরের জন্য মহাবলিপুরমকে বলা হত ‘সাত প্যাগোডার দেশ’। ছ’টি সমুদ্রগর্ভে। অক্ষত রয়েছে একটি এবং সেই অনন্য মন্দিরটি হল পাঁচ তলা শোর টেম্পল। সমুদ্রের তীরে অবস্থানের জন্য এই মন্দিরটির এমন নাম। পহ্লবরাজ রাজা সিংহর (৭০০-৭২৮ খ্রিস্টাব্দ) তৈরি। দ্রাবিড়ীয় শৈলীতে ধর্মরাজ রথের আঙ্গিকে পিরামিডের আদলে তৈরি এই মন্দির। এই মন্দিরচত্বরে মোট তিনটি মন্দির আছে যার মধ্যে একটি বড়ো ও দু’টি তুলনায় ছোটো। প্রধান মন্দিরটি ৬ ফুট উঁচু এবং মন্দিরগাত্রে শ্রীকৃষ্ণের নানা ভাস্কর্য খোদিত। অন্য দু’টি মন্দিরের নাম নৃপতিসিংহ পল্লব বিষ্ণুগৃহ এবং রাজাসিংহেশ্বর।

অন্যান্য দ্রষ্টব্য

মহাবলিপুরমের আরেক আকর্ষণ ব্যালান্সিং রক, ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতার নিদর্শন। বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে রয়েছে গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম। আর মহাবলিপুরমের সাগরবেলার আকর্ষণও ফ্যালনা নয়।  

আরও পড়ুন নভেম্বরেই চালু হতে চলেছে বিন্ধ্যাচলের কালী খোহ থেকে অষ্টভূজা পর্যন্ত রোপওয়ে

কী ভাবে যাবেন

ভারতের প্রায় সব বড়ো জায়গার সঙ্গে চেন্নাই ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত। চেন্নাই থেকে মহাবলিপুরম, ৫৭ কিমি। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মুহুর্মুহু বাস যায়। তা ছাড়া গাড়ি ভাড়া করেও চলে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

রয়েছে তামিলনাড়ু পর্যটনের হোটেল তামিলনাড়ু। অনলাইন বুকিং http://www.ttdconline.com/ এ ছাড়া বিভিন্ন দামের ও মানের প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। নেটে সার্চ করলেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া https://www.airbnb.co.in/ সার্চ করে নিজের বাজেট মাফিক হোটেল, হোমস্টে বা অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া যায়।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *