ঘরে বসে মানসভ্রমণ: চিল্কা-পাড়ে রম্ভা

sunrise on Chilika Lake

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: কেমন চলছে ঘরে বসে মানসভ্রমণ? অতি পরিচিত পর্যটনস্থল নয়, ভ্রমণ অনলাইন আপনাদের নিয়ে যাচ্ছে স্বল্পখ্যাত বা অখ্যাত পর্যটনস্থলে। ঘরবন্দি অবস্থায় পড়ুন, একঘেয়েমি কাটান আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করুন।

আজ চলুন রম্ভা, ওড়িশার চিল্কা হ্রদের পাড়ে।

Jetty at Rambha
রম্ভায় জেটিঘাট।

এক দিকে সবুজ পূর্বঘাট পাহাড়, অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর, মাঝে ছোটো বড়ো অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে চিলিকা হ্রদ, বাঙালিরা যাকে বলে চিল্কা হ্রদ। আর হ্রদের মধ্যেই পাহাড় সারি, পাড়ের কাছে, আবার পাড় থেকে দূরে। ১১৬৫ বর্গ কিমি জুড়ে এর ব্যাপ্তি। বর্ষায় চার পাশ গ্রাস করে ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়ে নেয়। আর এই বর্ষাকালেই এশিয়ার বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ হয়ে যায়। আর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে ভরপুর থাকে চিল্কা।

চিল্কা-পাড়ে তিনটি জায়গা আছে যেখানে থাকার মতো ব্যবস্থা আছে এবং যেখান থেকে মেশিন চালিত বোটে বা দেশি নৌকায় চিল্কার অন্দরে ভেসে যাওয়া যায়, চলে যাওয়া যায় বিভিন্ন দর্শনীয় দ্বীপে। এর মধ্যে সাতপড়া পুরীর কাছে, ৪৯ কিমি। পুরী ভ্রমণের সঙ্গে বেড়িয়ে নেওয়া যায় সাতপড়া। বাকি রইল বরকুল ও রম্ভা। এর মধ্যে পর্যটকদের কাছে বরকুলের চাহিদা বেশি, কারণ হাওড়া-বিশাখাপত্তনম রেলপথে বালুগাঁও স্টেশন থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে বরকুল। যাতায়াত যে হেতু তুলনায় সহজ, তাই বরকুলে পর্যটকদের পা বেশি পড়ে। তুলনায় অনেকটাই নির্জন রম্ভা।

Nirmaljhar
নির্মলঝর।

তাই চিল্কা-পাড়ে নিরিবিলিতে দিন কয়েক কাটানোর আদর্শ জায়গা রম্ভা। প্রকৃতি দেখুন, আর চিল্কা উপভোগ করুন, চিল্কায় ভেসে পড়ুন। নিখাদ বিশ্রাম নিন। কিংবা বেড়িয়ে পড়ুন। আশেপাশে অনেক জায়গা আছে যেগুলো ঘুরে নেওয়া যায় রম্ভা থেকে।

কী দেখবেন

(১) এক দিন ভেসে পড়ুন চিল্কায় – নৌকা ভাড়া করে চলুন ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড, হনিমুন আইল্যান্ড, বার্ডস আইল্যান্ড আর ঘণ্টসিলা গুহা ঘুরে আসুন।

Honeymoon Island
হনিমুন আইল্যান্ড।

(২) সকালেই বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমেই চলুন নির্মলঝর, ১৪ কিমি। দেখে নিন বিষ্ণু মন্দির কমপ্লেক্স। বিষ্ণু ছাড়াও আছেন শিব, পার্বতী, রাধাকৃষ্ণ, বিমলা, গণেশ, জগন্নাথ। সুন্দর পরিবেশ।

নির্মলঝর থেকে চলুন সালিয়া ড্যাম, ৩৪ কিমি। পাহাড়ে ঘেরা এই জলাধারের শোভা মন ভরিয়ে দেয়।

সালিয়া ড্যাম থেকে চলে আসুন বানাপুর শহরে, ১২ কিমি। দেখে নিন ভগবতী মন্দির

On the way to Kalijai Island from Barkul
বরকুল থেকে কালীযাই দ্বীপের পথে।

বানাপুর থেকে আসুন চিল্কা-পাড়ে বরকুল, ১৪ কিমি। চিল্কার জনপ্রিয় গেটওয়ে। ঘুরে নিন বরকুল। নৌকায় চলুন কালীযাই দ্বীপে – কালী, গঙ্গা ও যাইদেবীর মন্দির।

বরকুল থেকে চলুন পাহাড়-জঙ্গলের মাঝে নারায়ণী মন্দির, ১০ কিমি।  

নারায়ণী মন্দির মন্দির দেখে ফিরে আসুন রম্ভায়, ২৭ কিমি।

(৩) আর এক দিন বেরিয়ে পড়ুন। আজ প্রথমে চলুন গোপালপুর-অন-সি, ৪৯ কিমি। ওড়িশার গোপালপুর সৈকতের খ্যাতি সর্বজনবিদিত। প্রায় সারা দিন গোপালপুরে কাটিয়ে ফিরে চলুন রম্ভা। পথে দেখে নিন টাম্পারা লেক, গোপালপুর ২৬ কিমি। সমুদ্রের সঙ্গে যোগ আছে এই সুন্দর লেকটির। টাম্পারা দেখে ফিরে চলুন রম্ভা, ২৩ কিমি।     

Gopalpur-on-sea
গোপালপুর সৈকত।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া-বিশাখাপত্তনম রেলপথে ছোট্ট স্টেশন রম্ভা। তাই বেশির ভাগ মেল-এক্সপ্রেস ট্রেন এখানে থামে না। দেশের যে কোনো জায়গা থেকে এলে বালুগাঁও বা ছত্রপুরে নেমে গাড়ি করে আসতে হবে অথবা খুরদা রোড বা ভুবনেশ্বরে ট্রেন বদল করে আসতে পারেন।

কলকাতা থেকে যাওয়ার সুবিধাজনক ট্রেন – (১) হাওড়া-যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস – হাওড়া ছাড়ে রাত ৮,৩৫ মিনিটে, বালুগাঁও পৌঁছোয় ভোর ৫.০২ মিনিটে। (২) হাওড়া-চেন্নাই মেল – হাওড়া ছাড়ে রাত পৌনে ১১টায়, বালুগাঁও পৌঁছোয় সকাল ৮.১৭ মিনিটে, ছত্রপুর পৌঁছোয় ৮,৫৮ মিনিটে।

বালুগাঁও থেকে রম্ভা ৩২ কিমি আর ছত্রপুর থেকে রম্ভা ২৩ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন।  

ট্রেন বদল করেও আসতে পারেন – হাওড়া-যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস ভুবনেশ্বর পৌঁছোয় রাত ৩.২৫ মিনিটে, হাওড়া-চেন্নাই মেল ভুবনেশ্বর পৌঁছোয় সকাল সাড়ে ৬টায়, হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে রাত সাড়ে ১০টায়, ভুবনেশ্বর পৌঁছোয় ভোর ৫.৩৩ মিনিটে। ভুবনেশ্বর-বিশাখাপত্তনম ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ভুবনেশ্বর থেকে ছাড়ে সকাল ৭.৩৫ মিনিটে, রম্ভা পৌঁছোয় সকাল ৯.৪০ মিনিটে।

Saliya Dam
সালিয়া ড্যাম।

ধৌলি এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল ৬টায়, খুরদা রোড পৌঁছোয় দুপুর দেড়টায়। পুরী-তিরুপতি এক্সপ্রেস (মঙ্গল ও শনি বাদে) খুরদা রোড থেকে ছাড়ে দুপুর ২.২৫ মিনিটে, রম্ভা পৌঁছোয় বিকেল ৪.০৯ মিনিটে।                            

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য সব চেয়ে ভালো জায়গা ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস। অনলাইন বুকিং https://www.panthanivas.com/। রয়েছে কিছু বেসরকারি হোটেল। নেটে সার্চ করলে পেয়ে যাবেন।  

জেনে রাখুন

ট্রেনের বিশদ তথ্যের জন্য দেখুন erail.in

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *