কলকাতা দর্শন: দেখে আসুন ট্রাম মিউজিয়াম ‘স্মরণিকা’

Tram Museum 'Smaranika'

শুভদীপ রায় চৌধুরী

তিলোত্তমা, আমার গর্বের কলকাতা। কলকাতার ঐতিহ্য আর ইতিহাস তিলোত্তমাকে আরও গরবিনী করে। বলা বাহুল্য এই শহরের প্রতিটি প্রান্তে আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্য। প্রতিটি কলকাতাপ্রেমীর উচিত নিজের প্রাণের শহরকে আরও ভালো ভাবে চেনা এবং সেই ঐতিহ্য-ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা।

এই বাঁচিয়ে রাখার কাজে এগিয়ে এসেছে কলকাতার ট্রাম সংগঠন। তারা তৈরি করেছে এক অসাধারণ সংগ্রহশালা, যেখানে গেলে আপনি পৌঁছে যাবেন পুরোনো দিনের কলকাতায়, আর ট্রামে বসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করবেন পুরোনো কলকাতার গন্ধ।

ঘোড়ায় টানা ট্রাম।

কোথায় এই মিউজিয়াম, কী ভাবে যাবেন

এই ট্রাম মিউজিয়াম রয়েছে ধর্মতলার ট্রাম ডিপোয়। বাসে কলকাতা শহরের ধর্মতলা মোড়ে নেমে হেঁটে চলে যান সেখানে। হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদা স্টেশন এবং কলকাতার প্রায় সব অঞ্চল থেকে বাস আসে ধর্মতলায়। এ ছাড়া মেট্রোয় ধর্মতলা আসতে চাইলে নামতে হবে এসপ্লানেড স্টেশনে। কলকাতায় নবাগত হলে বা শহরের পথঘাট খুব চেনা না হলে ধর্মতলায় বাস থেকে নেমে যে কাউকে বলুন, তিনি ধর্মতলার ট্রাম ডিপোর পথ বলে দেবেন।

দর্শনের সময় ও দর্শনী

ট্রাম মিউজিয়াম খোলা থাকে দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বন্ধ। টিকিটের হার জনপ্রতি ২০ টাকা।

কোভিড আবহে নিয়মকানুন

করোনা-আবহে মিউজিয়াম দর্শনে কিছু নিয়ম পালন করতে হচ্ছে। মাস্ক পরে প্রবেশ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া ১০ জনের বেশি এক সঙ্গে সংগ্রহশালায় প্রবেশ করা যাবে না।

কী দেখবেন মিউজিয়ামে

কলকাতায় ট্রামের বয়স হল প্রায় দেড়শো বছর। ট্রামের এই ইতিহাস সর্বজনের কাছে তুলে ধরার জন্য ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি এই অভিনব মিউজিয়াম তৈরি করে। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এর উদ্বোধন হয়। ট্রাম সংগঠন এই সংগ্রহশালার নাম দিয়েছে ‘স্মরণিকা’।

এক কামরার এসি ট্রাম।

সব থেকে অভিনব বিষয়টি হল এই সংগ্রহশালা একটি ট্রামের মধ্যেই অবস্থিত। দু’ কামরাবিশিষ্ট একটি ট্রামের প্রথম কামরাটি ক্যাফেটেরিয়া আর দ্বিতীয় কামরাটি সংগ্রহশালা। এটিই দেশের একমাত্র ট্রাম মিউজিয়াম।

এখানে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক উপাদান। পুরোনো কলকাতার ছবি থেকে শুরু করে ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস, সব কিছুই হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন ‘স্মরণিকা’ ট্রাম মিউজিয়ামে গেলে।

১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় ট্রাম চালু হয়। এই মিউজিয়ামে পৌঁছোলেই দেখতে পাবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের স্মৃতিচারণ। এ ছাড়া ‘স্মরণিকা’য় রয়েছে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ট্রামের মডেল – ঘোড়ায় টানা ট্রাম থেকে শুরু করে ১৮৮২ সালের স্টিম ইঞ্জিন, তার পর ১৯০৩ সালে শুরু হওয়া বিদ্যুৎচালিত ট্রাম এবং শেষ কালে হাল আমলের এসি ট্রাম। কন্ট্রোলার টপ কভার, পয়েন্ট বার, কয়েন এক্সচেঞ্জার — নানা সময়ে ব্যবহৃত ট্রামের যন্ত্রাংশ ছাড়াও আগ্রহীরা ‘স্মরণিকা’য় দেখতে পাবেন ট্রামের পুরোনো মাসিক ও দৈনিক টিকিট, ট্রামকর্মীদের উর্দি-ট্রেনিং ব্যাজ-টুপি-বোতাম, ট্রেজারিতে রাখা প্রাচীন মুদ্রা প্রভৃতি।

ক্যাফেটেরিয়া।

কলকাতার শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বিভিন্ন সময়ে রুট বদলের টিকিট থেকে শুরু করে ১৯৩১ সালে নোনাপুকুর ট্রামডিপোয় রাখা #৫৬৭নং ট্রামের মডেল। এই ট্রামটি ২০১৩-য় ব্যবহৃত হয়েছিল ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’ ফিল্মে। তাই ট্রাম মিউজিয়ামেও মডেলটি বর্ণনার শিরোনামে রয়েছে ‘ব্যোমকেশ বক্সি ট্রামকার’।

আপনিও পৌঁছে যান ‘স্মরণিকা’য় আর শীতকালের আমেজ উপভোগ করতে করতে জেনে নিন কলকাতার ট্রামের ইতিহাসের কথা। আর ক্যাফেটেরিয়ায় গরম চা বা কফিতে চুমুক দিতে ভুলবেন না।

আরও পড়ুন: সমস্ত গাড়িতে ‘ফাসট্যাগ’ বাধ্যতামূলক ১ জানুয়ারি থেকে, না থাকলে গুনতে হতে পারে দ্বিগুণ টোলট্যাক্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *